reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ অক্টোবর, ২০২১

সফল নারী উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব

ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে হয় তানিয়াকে। ঠিক সেসময়টায়ই শোনেন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি নামে এক বিষয়ের কথা। যা কি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। খুব নতুন এই বিষয়টি তাকে না টানলেও যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, তাই সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় টিকে গেলে ভর্তি হয়ে যান।

হাজারীবাগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হওয়ায় বাসা থেকে নিয়মিত যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাই ঢাকায় নিজের বাসা ছেড়ে হলে চলে আসেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানেই অল্প পুঁজিতে ছোট ব্যবসা শুরু করেন। কখনো পোশাকের ব্যবসা তো কখনো হলে খাবার সরবরাহ করেছেন। সেসব ব্যবসার খুব অল্প মুনাফাই পকেটে আসত। সেটা নিয়ে মাথা ঘামাননি। কেননা এসব করতেন শখের বসে। কাজে ডুবে থাকা যেন নেশা হয়ে গিয়েছিল তানিয়ার। তাই এতটুকু অবসর মিললেও সে সময়টা কীভাবে ব্যবহার করবেন, সারাক্ষণ সে চিন্তাই করতেন।

নিজের পড়াশোনা, ছোট ব্যবসা এসবের পাশাপাশি সময় হলেই ঢুঁ মারতেন হাজারীবাগের চামড়ার কারখানাগুলোয়। দেখতেন কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছে চামড়ার তৈরি ব্যাগ, বেল্ট, ডায়েরির কভারসহ বিভিন্ন সামগ্রী। একটা সময় এসে তার মনে হলো চাইলে তিনিই তো এসব তৈরির ছোট কারখানা করতে পারেন। যেহেতু পড়াশোনা করছেন লেদার নিয়ে, তাই পড়াশোনা কাজে লাগিয়ে আরো ভালো কিছু করা সম্ভব।

সে সময় করপোরেট গিফট আইটেম তৈরির ভাবনা থেকে ২০০৫ সালে ছোট পরিসরে হাজারীবাগে একটা দোকান আর একটা মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেন করপোরেট গিফট তৈরি। প্রথম দিকে বেশ অল্প কিছু ডায়েরি, ওয়ালেট তৈরি করে বিভিন্ন অফিসে দেখার জন্য দিতেন। কিন্তু অধিকাংশ জায়গা থেকেই সাড়া মেলেনি। তাই বলে হাল ছাড়েননি তানিয়া।

এভাবেই একবার একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৬০০ ডায়েরি তৈরির প্রস্তাব আসে তার কাছে। সেই প্রস্তাব লুফে নিলেন তিনি। সে সময়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে গিয়ে তানিয়া বলেন, হঠাৎই এত বড় একটা কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। সেসময় এতগুলো ডায়েরি তৈরি করার মতো লোকবল আমার ছিল না। কিন্তু আমি মানসিকভাবে যথেষ্ট সবল ছিলাম বলেই হয়তো পুরো পরিস্থিতি বেশ দৃঢ়ভাবে সামলে নিয়েছিলাম।

সেবার বেশ ভালোভাবেই কাজটা সম্পন্ন করেছিলেন। সেটা থেকে লাভের খাতায় খুব বড় অঙ্ক যোগ না হলেও সেটাই ছিল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম কোনো কাজ। এরপর বিভিন্ন নামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জমা হতে থাকে তানিয়ার ভাণ্ডারে।

সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে যাত্রা হয় তার কারখানা ‘কারিগর’-এর। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে কারিগর। ছোট কারিগর বড় হয়েছে। এখন তার কারখানায় নিয়মিত কাজ করছেন অর্ধশতাধিক লেদার প্রডাক্ট তৈরির কারিগর। আর অনিয়মিতর তালিকায় আছেন আরো দুই শতাধিক শ্রমিক। দেশ ও বিদেশের অনেক নামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুযোগ ঘটে কারিগরের। এমনকি বিভিন্ন দেশে তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য সুনাম কুড়াচ্ছে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিইবা হতে পারে।

তানিয়ার প্রাপ্তির ডালাভর্তি এখন বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডের গল্পে। সফল নারী উদ্যোক্তার তকমা নিজের করে নিয়েছেন পরিশ্রম দিয়ে। ২০০৮ সালে সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার, ২০১১ সালে এফবিসিসিআইয়ের সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার, ডিএইচএল আউটস্ট্যান্ডিং উইম্যান ইন বিজনেস পুরস্কারসহ বেশকিছু পুরস্কার পান তিনি। শুধু কি তাই? তরুণ উদ্যোক্তা এবং অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে আমেরিকান সরকার তাকে সম্মানজনক সিটিজেনশিপ প্রদান করেন। ২০১১ সালে ফ্লোরিডা রাজ্যের মেয়র কর্তৃক এ সম্মানসূচক সিটিজেনশিপ গ্রহণ করেন তানিয়া।

টানা কয়েক বছর চোখ-মুখ বন্ধ করে কাজে ডুবে থাকা নারী তানিয়া ওয়াহাব এখন বাংলাদেশের সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। দীর্ঘ অসমান পথ পাড়ি দিয়ে এ সময়ে এসে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছেন সফল এ নারী। নিজের প্রতিষ্ঠান কারিগরের সঙ্গে সঙ্গে সামলাচ্ছেন ‘ট্যান’ নামে একটি অনলাইন বিজনেসও।

এর মাধ্যমে যাতে গ্রাহকের কাছে আরো সহজে পৌঁছে যায় চামড়ার তৈরি বিভিন্ন পণ্য সেই প্রচেষ্টাই তার। এ ছাড়া হোপ নামে একটা সংগঠনের সংগঠকও তিনি। যা মূলত উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-সংক্রান্ত তথ্যসেবা সরবরাহ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, বৃত্তি, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ফেলোশিপ, অ্যাওয়ার্ড, ওয়ার্কশপসহ নানা তথ্যে ভরপুর অনলাইন পেজ হোপ।

হোপ নিয়ে তানিয়া বলেন, আমাদের দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা বেশ ভালো কাজ করেন। পিছিয়ে নেই নারী উদ্যোক্তারাও। কিন্তু সঠিক নির্দেশনার অভাবে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না তারা। আমি সেসব নারী এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার অর্থেই হোপ নিয়ে কাজ করছি। যেখানে তারা ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ, ফেলোশিপ, ওয়ার্কশপের খবরাখবর, আবেদন করার প্রক্রিয়া ইত্যাদি সব ধরনের সহায়তা পাবেন।

মনের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে পারলে সফল হওয়া যায় বলেই বিশ্বাস করেন সফল এ ব্যবসায়ী। তার মতে, নারী তখনই সবকিছু উতরে যেতে পারবেন, যখন বিশ্বাস করবেন তিনি এটা পারবেনই।

এতসব সামলে অবসর নেই এতটুকু। তবু সাহিত্য খুব বেশি টানে বলে সময় সুযোগ পেলে প্রিয় কোনো বই নিয়ে বসে পড়েন ব্যবসায়ী এ নারী। কিংবা লেখালেখি করেন পছন্দসই বিষয় নিয়ে। মনের খোরাক জোগাতেই নাকি দিনশেষে তিনি প্রিয় সাহিত্যকে জায়গা দেন প্রাত্যহিক কাজের তালিকায়।

তথ্যসূত্র : সংগৃহীত

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close