reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ আগস্ট, ২০২১

সুইজারল্যান্ড, ইতালিসহ আট দেশে যায় মাকসুদার পণ্য

নিজের জমানো অর্থ ও গহনা বিক্রির টাকা দিয়ে ২০১৬ সালে ব্যবসা শুরু করেন ঢাকার মেয়ে মাকসুদা খাতুন। তার ‘শাবাব লেদার’ নামের প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথমে পাঁচজন শ্রমিক থাকলেও বর্তমানে কাজ করছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। শুরুতে দুটি মডেলের চামড়ার লং জেন্টস ওয়ালেট বানালেও বর্তমানে তার ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে এক্সিকিউটিভ ব্যাগ, এক্সিকিউটিভ ফাইল, লেডিস ব্যাগ, মেসেঞ্জার ব্যাগ, লেডিস পার্স, ব্যাকপ্যাক, বেল্ট, মাউস প্যাড, চাবির রিং, করপোরেট গিফট আইটেম, পেন হোল্ডার, পেন স্ট্যান্ড, ডায়েরি কভার, জ্যাকেটসহ যাবতীয় চামড়াজাত পণ্য।

‘যখন শুরু করি, তখন চারপাশের মানুষজন বলতে শুরু করে, মেয়েরা আবার ব্যবসা করে নাকি। বড়জোর টিচিং কিংবা ব্যাংকে চাকরি করবে। ফ্যামিলি থেকে বাধা তো ছিলই, পাশাপাশি পুঁজির একটা অভাব ছিল। তবে নিজে কিছু করার একটা জেদ ছিল, তাই হয়তো সব বাধা অতিক্রম করতে পেরেছি।’

মাকসুদা বলেন, বর্তমানে সুইজারল্যান্ড, ইতালি, গ্রিসসহ আট দেশে আমার পণ্য যায়। নিজেরা তৈরির পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট লাগেজ, কারুপণ্যসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছি। এ ছাড়া করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে সাপোর্ট দিচ্ছি। করোনা-পরবর্তী সময়ে আমরা অনলাইনে ব্যাপক রেসপন্স পেয়েছি। দারাজ, দেশিবেশিসহ বেশ কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফরমে আমাদের পণ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া এফ-কমার্সেও আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।

উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষকতা পেশায় মনোনিবেশ করেছিলেন মাকসুদা। তবে সব সময়ই নিজে কিছু করার আগ্রহ ছিল তার। মাকসুদার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি পার্টনারশিপে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করছিলেন। একপর্যায়ে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে স্বামীর ব্যবসার হাল ধরেন মাকসুদা। নানা জটিলতায় লোকসান হতে থাকায় বন্ধ হয়ে যায় স্বামীর ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেসময় প্রায় ৭০ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় আসে মাকসুদা দম্পতির। তাতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মাকসুদার স্বামী। নিজে শক্ত থেকে ব্যবসা দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেন মাকসুদা। প্রথমে নিজেই বিভিন্ন দোকানে উৎপাদিত পণ্যের বিপণন শুরু করেন।

মাকসুদা বলেন, ঋণের পরিমাণটা এত ছিল যে, আমি বুঝতে পারি চাকরি করে এটা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তখন ব্যবসাটা মোটামুটি আয়ত্ত করে ফেলেছি। পুরোনো কিছু যন্ত্রপাতি কিনে শুরু করি। বুঝতে পারছিলাম নিজের পরিবারের জন্য কিছু করতে হবে। ঋণ শোধ করতে হবে। তা না হলে দুদিন পরে জেলে যেতে হবে। কেরানীগঞ্জে একটি ফ্ল্যাট, কিছু গহনা বিক্রি ও ডিপিএস ভেঙে কিছু ঋণ শোধ করলাম। প্রায় ১০ লাখ পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এখন ৩০টির মতো শোরুমে আমার পণ্য যাচ্ছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে একটি শোরুম নিয়েছি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফুটওয়্যার বিজনেস শুরু করেছি। এ ছাড়া বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ‘প্রেসিডেন্ট’-এ আমার পণ্য যাচ্ছে। ব্যাংক-বিমাসহ আটটা করপোরেট প্রতিষ্ঠানে শাবাব লেদার সাপোর্ট দিয়ে থাকে। আরো কয়েকটিতে কথা বলছি। তিনি বলেন, শুধু পুরুষরাই নারীদের জায়গা করে দেবে, তা নয়। নারীদের নিজের জন্য পরিচয় তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করতে হবে। নিজে সৎ থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সব বাধাই অতিক্রম করা যায় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সব ধরনের লাইসেন্স, পেপার সবকিছু আমি দ্রুত করতে পেরেছি। সেসব সমস্যা অন্য সব উদ্যোক্তা ফেস করেন, আমিও সেসব ঘটনা ফেস করেছি। এই উদ্যোক্তা বর্তমানে ওমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর বাংলাদেশ, ওমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর, নতুন প্রজন্ম, চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গেও কাজ করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close