জীবনযাপন ডেস্ক
মনের অসুখ সারাতে যা করবেন
‘মনের নাম মহাশয়, যাহা করে তাহাই হয়’। কিন্তু এই মনও যে কোনো কোনো সময় অবাধ্য হয়ে ওঠে, তা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না। এর থেকে জন্ম নেয় হতাশা। যার প্রভাব পড়ে দেহযন্ত্রে। ফলে ঘটতে পারে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সায়মা রিয়াসাত জানাচ্ছেন, মুড সুইং একটি সাধারণ বিষয়। কিন্তু সেটা যদি খুব ঘন ঘন হয়, তবে বুঝতে হবে আপনি হতাশায় ভুগছেন। দৈনন্দিন কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, কোনো কিছুই ভালো না লাগা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা ক্ষুধামান্দ্য হওয়া, বেশি বেশি ঘুমানো অথবা অনিদ্রা এগুলো সবই হতাশার লক্ষণ। এ ছাড়া সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করা, মৃত্যুভয়, জীবন একঘেয়ে লাগা, কারোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না করাও হতাশার লক্ষণ। কেন এই হতাশা? ডিপ্রেশনের বহু কারণ যেমন থাকতে পারে, তেমনি নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াও মানুষ ভুগতে পারে হতাশায়। পরিবার বা কাছের কারোর মৃত্যু, ডিভোর্স কিংবা ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া অ্যাবিউসিভ কোনো ঘটনা হতে পারে হতাশার কারণ। এ ছাড়া জীবনের বড় কোনো পরিবর্তন যেমন বিয়ে, নতুন কলেজ/ইউনিভার্সিটি, চাকরি চলে যাওয়া, নতুন চাকরি, কাছের কারোর সঙ্গে দূরত্ব এগুলোর কারণেও মানুষ নিমজ্জিত হতে পারে হতাশায়। অনেক সময় জেনেটিক কারণে মানুষ হতাশায় ভোগে। সাধারণত পরিবারের কারোর কাছ থেকে এই হতাশা বংশানুক্রমে চলে আসে।
তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ থেকে পরিত্রাণেরও উপায় রয়েছে। যেমন ধরুন যদি আপনি মনে করেন হতাশায় ভুগছেন, নিজেকে সেখান থেকে বের করার চেষ্টা শুরু করুন দ্রুত। মনে রাখবেন, নিজেকে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। সব সময় নিজেকে আনন্দে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভালো থাকার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। অনেক সম্পত্তি থাকলেই সে খুব সুখী এমনটা নয়। ফলে অমুকের এটা আছে, আমার নেই এমন চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারোর সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে অবসাদগ্রস্ত হওয়া যাবে না। আপনি যাকে পুরোপুরি সুখী ভাবছেন, তারও কোনো না কোনো অপ্রাপ্তি আছে। ফলে এখানে নিজের চেয়ে কাউকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার একদমই প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেকে কতটুকু ভালো রাখতে পারছেন, সেটার ওপরই আপনার নিজের আনন্দ নির্ভর করছে।
নিজের শখের কাজ খুঁজে বের করুন। হতে পারে বই পড়া, সিনেমা দেখা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। ক্রিয়েটিভ কাজে উৎসাহ পেলে সেটাকেও আঁকড়ে ধরতে পারেন। ব্যস্ত থাকুন এসব কাজে। একই নিয়মে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। খাবারের সময়ও ঠিক রাখুন। প্রতিদিন কিছুক্ষণ শরীরচর্চা করুন। খুব জরুরি একটি বিষয় হচ্ছে নিজের মনের ভাব প্রকাশের চর্চা রাখা। আপনি হতাশায় ভুগছেন সেটা পরিবারের সদস্য বা কাছের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আপনার কেমন লাগছে, কেন এমন লাগছে এগুলো বলুন তাদের। সমাজ কী বলবে বা মানুষ কটাক্ষ করবে এ ধরনের চিন্তা একেবারেই করবেন না। এ ছাড়া হতাশা কাটাতে বিশেষজ্ঞ কাউন্সিলরের সাহায্য নিতে পারেন। নিয়মিত কাউন্সেলিং আপনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করবে। কেবল নিজের ক্ষেত্রেই নয়, যদি লক্ষ করেন যে পরিবারের কেউ বা বন্ধুদের কেউ হঠাৎ খানিকটা অদ্ভুত আচরণ করছে কিংবা চুপচাপ হয়ে গেছে তবে হয়তো তিনিও হতাশায় ভুগছেন। আপনার দায়িত্ব তখন তাকে সাহায্য করা। সূত্র : আনন্দ বাজার
"