মাওলানা আতিকুল্লাহ বিন রফিক
দুনিয়ায় পাপের শাস্তি হয় যেভাবে
আল্লাহতায়ালার কোনো আদেশ বা নিষেধ না মানাই মূলত গুনাহ। যাকে বাংলায় বলা হয় পাপ। পাপ ছোট হোক বা বড়, সব সময় বর্জনীয়। পাপের চূড়ান্ত শাস্তি আখিরাতে হলেও অনেক সময় দুনিয়াতেও আল্লাহতায়ালা শাস্তি দিয়ে থাকেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোক পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোক অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদল চাপিয়ে দেন।’ (মুয়াত্তা মালেক : ১৩২৩)
হাদিসে দেখা যাচ্ছে, চূড়ান্ত শাস্তির অংশ মানুষকে পার্থিব জীবনেও কিছুটা ভোগ করতে হয়। আর শাস্তির ধরন নানা রকম হয়ে থাকে। কাউকে অসুস্থতার মাধ্যমে, কাউকে অসহায়ত্বের মাধ্যমে, কাউকে আবার ইমান হরণের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়।
পবিত্র কোরআনে আখিরাতের শাস্তিকে বড় ও দুনিয়ার শাস্তিকে ছোট শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, বড় শাস্তি আসার আগে তিনি ছোট শাস্তি দিয়ে মানুষকে সাবধান করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘গুরুতর শাস্তির আগে আমি তাদের অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা সাজদা : ২১)
পাপের প্রথম শাস্তি হলো মানসিক অস্থিরতা। এরপর নানা আপদে পতিত হতে হয় পাপীকে। পাপের ক্ষতিপূরণ ও তওবার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে না এলে তার যন্ত্রণা, বিপদ-মসিবত ভারী হতে থাকে। জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর করে দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে আমার জিকির থেকে বিমুখ হয়, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর হয়ে ওঠে।’ (সুরা ত্বহা : ১২৪)
তওবা ও নেক আমলের কারণে শাস্তি কমে যায় বা কখনো দূর হয়ে যায়। কেননা অন্তরের প্রশান্তি আল্লাহতায়ালা শুধু তার প্রিয় বান্দাদেরই দিয়ে থাকেন। আর তওবাকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন। তবে গুনাহের পর তওবা করতে দেরি করলে সেই সুবিধাটা পাওয়া যায় না। এমনকি পরকালেও তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘...আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন মাথার ওপর মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে- আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফুরি (অবাধ্য) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা নিসা : ১৭-১৮)
মূলত আল্লাহতায়ালা মানুষকে শুধু ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।’ (সুরা আজ-জারিয়াত : ৫৬)
সেই দায়িত্ব থেকে কেউ বিমুখ হলে, তাকে গন্তব্যস্থল থেকেই বিচ্যুত হতে হয়। তাই তো দেখা যায়, উন্নত বিশ্বের মানুষের জন্য আনন্দ-প্রমোদ ও ভোগ-বিলাসের অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকলেও তাদের অন্তরে নেই প্রশান্তির ছোঁয়া। সবার মধ্যে বিরাজ করে বিষণ্ণতা ও অস্থিরতা। আত্মহত্যার প্রবণতাও ওসব দেশেই বেশি দেখা যায়।
"