প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বিধিনিষেধ আরো শিথিল ব্রিটেনে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সতর্কবার্তা উড়িয়ে দিয়ে, স্বাধীনতার ‘রোডম্যাপ’ ধরে আরো এক পা এগোল ব্রিটেন। গত সোমবার থেকে আরো কিছুটা শিথিল করা হলো করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে নেওয়া বিধিনিষেধ।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, লকডাউন থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে ব্রিটেন। এই ধাপে অতিপ্রয়োজনীয় নয় এমন দোকানও খুলে দেওয়া হচ্ছে। খোলা হয়েছে জিম, সেলুন, পাব, আউটডোর রেস্তোরাঁ। চিড়িয়াখানাতেও যেতে পারবেন মানুষ। গত তিন মাস সরকারি নির্দেশে বন্ধ ছিল এই সবই।
জনসন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, সরকারের এ সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা অনেকটাই স্বস্তি পাবেন। সাধারণ মানুষও এত দিন ধরে ঘরবন্দি। এবার তারা এসব জায়গায় যেতে পারবেন। তবে প্রত্যেকের কাছে আর্জি, নিজেদের দায়িত্ব ভুলবেন না। হাত ধুতে হবে, মুখ ঢাকতে হবে, দূরত্ববিধি আবশ্যিক এবং বিশুদ্ধ বাতাস।’
ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৯০ লাখ ডোজ টিকাকরণ হয়েছে। ৭০ লাখ বাসিন্দার দুটি ডোজই নেওয়া হয়েছে। এটি দেশের জনসংখ্যার ১০.৫১ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়া বাকি। যাদের টিকাকরণ শেষ হয়েছে তার বড় অংশই প্রবীণ। নবীন প্রজন্ম এখন প্রতিষেধকহীন। এ অবস্থায় লকডাউন তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করেন হু-র ইউরোপ শাখার বিশেষজ্ঞ ক্যাথরিন স্মলউড। সম্প্রতি তিনি একটি সাক্ষাৎকারে জানান, কড়া বিধিনিষেধের জন্যই সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। বিধি হালকা করে দিলে ফল ভালো হবে না। স্মলউড আরো বলেন, ‘ভাইরাস শক্তি বাড়িয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ ক্ষমতা ও মারণ ক্ষমতা, দুই-ই বেশি। এই নতুন স্ট্রেনের সামনে এখন কম বয়সিরা যাদের টিকাকরণ হয়নি। এখনই নিজেদের সাফল্যে ব্রিটেনের খুশি হওয়ার মতো কিছু হয়নি।’
বিধি হালকা হতেই আজ লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটে দোকানের বাইরে দেখা যায় ক্রেতাদের লম্বা লাইন। রেস্তোরাঁ খুলেছে, তবে অল্পই। ৪০ শতাংশ রেস্তোরাঁর বাইরে খেতে বসার ব্যবস্থা আছে। এ ব্যবস্থা না থাকলে আপাতত খোলার অনুমতি নেই। তবে সরকারের আশ্বাস এ বছর গরমের ছুটিটা উপভোগ করতে পারবে দেশবাসী।
পড়শি দেশ জার্মানির ছবি পুরোই উল্টো। অবস্থা বেশ সঙ্গিন। আইসিইউয়ে জায়গা ফাঁকা নেই। আগামী ১০-১৫ দিনে অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম ভুগতে হয়েছিল জার্মানিকে। কিন্তু এ বছর ছবিটা ভিন্ন। এ পর্যন্ত ৩০ লাখ মানুষ আক্রান্ত। আর মারা গিয়েছেন ৭৮ হাজার ৫০০ জন। অর্থাৎ মৃত্যুহার বেশি। দেশের এই পরিস্থিতির জন্য ব্রিটেন স্ট্রেনকে দায়ী করেছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মারকেল।
ব্যাপক কড়াকড়ি জারি রয়েছে বেলজিয়ামেও। এর বিরুদ্ধে নাটক মঞ্চস্থ করতে চলেছে একটি নাট্যদল। তাদের বক্তব্য, ‘এভাবে মানুষকে দিনের পর দিন ঘরবন্দি করে রাখার জেরে আর্থিক অবস্থা তলানিতে ঠেকেছে। লোকে খেতে পাচ্ছেন না। বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না।’
হু জানিয়েছে, গত ৭ সপ্তাহে বিশ্বে ৭০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
"