প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ এপ্রিল, ২০২১

ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র

সাগরেই ১০ লাখ টন বর্জ্য ফেলছে জাপান

ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের বর্জ্য সাগরে ফেলার অনুমতি দিয়েছে জাপান সরকার। সাগরে ফেলা এ পরমাণু বর্জ্যরে পরিমাণ ১০ লাখ টনের বেশি হবে। জাপান বলছে, এ সিদ্ধান্ত নিতে তারা এক বছর ধরে আলোচনা করে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার জাপান সরকার এ অনুমোদনের কথা জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জাপান সরকারের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়ন্ত্রক মানদন্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আসা পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সমুদ্রে (পানি) নির্গমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এক খবরে বলা হয়েছে, ৫০০টি প্রমাণ আকৃতির সুইমিং পুলের সমপরিমাণ এই পানিকে বিশুদ্ধীকরণ করা হয়েছে। তবে এর মধ্য থেকে ক্ষতিকর আইসোটোপ সরানোর জন্য পুনরায় ফিল্টার করার প্রয়োজন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী এ বিপুল পরিমাণ পানিকে বিশেষ প্রক্রিয়াকরণের (ডাইলুট) মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

এদিকে জাপানের সিদ্ধান্তটি ‘কোনোভাবেই মানা সম্ভব না’ বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বিষয়টি নিয়ে দাপ্তরিক অভিযোগ করা হবে বলেও জানায় দক্ষিণ কোরীয় প্রশাসন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে জনগণের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গতকাল সিউলে জাপান দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদে শামিল হন কিছু মানুষ। তারা জাপানের এ সিদ্ধান্তকে ‘পারমাণবিক সন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাপানের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস জাপান। বিষয়টি নিয়ে এক পিটিশনে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৪ জন মানুষের স্বাক্ষর নিয়েছে সংগঠনটি।

তাছাড়া স্থানীয়ভাবেও এ পরিকল্পনার অনুমোদন না দিতে আন্দোলন চলছিল। টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি পরিচালিত ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র থেকে জাপান প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য পদার্থ থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও খুব ভয়াবহ। এই বর্জ্য পদার্থের মধ্যে থাকে প্লাটোনিয়াম পরমাণুর বিভিন্ন আইসোটোপ। যেমন প্লাটোনিয়াম ২৩৯, ২৩৮, ২৪১ ইত্যাদি। এগুলোর তেজস্ক্রিয়তা বজায় থাকে হাজার হাজার বছর ধরে অর্থাৎ হাজার বছর ধরেই এগুলো দূষণ ছড়ায়। এই বর্জ্যগুলো নিরাপদে নিষ্কাশনের কোনো উপায় এখনো আবিষ্কার করা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র এত দিন লাসভেগাস থেকে ১০০ মাইল দূরে পাহাড়ের গভীরে এই পারমাণবিক বর্জ্য পুঁতে রাখত। ২০১০ সালে পাহাড়ে পুঁতে রাখার কর্মসূচি পরিত্যক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ফান্ড রয়েছে, যার পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার।

এই বর্জ্য নিষ্কাশনের সমস্যা ছাড়া আরো সমস্যা আছে। পারমাণবিক চুল্লিকে ঠন্ডা খার জন্য তাকে ঘিরে ঠান্ডা পানির প্রবাহ চালানো হয় (জাপানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল ওই পানি দিয়ে ঠান্ডা করার প্রযুক্তি বা কুলিং সিস্টেম অচল হয়ে পড়ায়)। যদি কোনোভাবে ওই পানির পাইপে ছিদ্র বা ফাটল সৃষ্টি হয় তাহলে প্রতিদিন চুল্লিতে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ পানি তেজস্ক্রিয়াযুক্ত হয়ে পড়বে। ফলে ওই পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত নদী বা সাগরের পানিও দূষিত করবে।

জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের বর্জ্য পানির সঙ্গে মিশে আশপাশের বিত্ত্রর্ণ এলাকার, এমনকি প্রশাত্মা মহাসাগরের ওপারের জনগণকেও বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। খবর বিবিসির।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close