প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
এখনই আফগানিস্তান ছাড়তে চায় না যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তালেবানের করা চুক্তি খতিয়ে দেখতে চান বাইডেন
এখনই আফগানিস্তান ছাড়তে রাজি নয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ‘মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে আফগানিস্তানজুড়ে তালেবানের ব্যাপক সামরিক উত্থান হতে পারে।’ এ অজুহাতে তারা এখনই আফগানিস্তান না ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে করা চুক্তি অনুযায়ী আগামী মাসের শেষ নাগাদ সব মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই আফগান প্রেসিডেন্টকে দেওয়া এক চিঠিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তালেবানের নতুন উত্থানের শঙ্কার কথা জানিয়ে সেনা প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানালেন। খবর বিবিসি অনলাইনের।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানকে উৎখাতের লক্ষ্য নিয়ে তারা হামলা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯-১১ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল। পরে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হলেও দেশটিতে এত বছরেও যুদ্ধের অবসান ঘটেনি। অবশেষে যুদ্ধের কোনো সমাপ্তি ছাড়াই ‘চুক্তি করে’ আফগানিস্তান ছাড়তে রাজি হয় আমেরিকা। তালেবানের সঙ্গে বারবার বৈঠকের পর ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও চলতি বছর জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন জানায়, তারা সেই চুক্তি ‘রিভিউ’ করবে।
ওই চুক্তি অনুযায়ী মে মাসের ১ তারিখের আগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর সব সদস্য আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে হবে। এর বিনিময়ে তালেবান আফগানিস্তানে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে। কিন্তু এখন বাইডেন প্রশাসন বলছে, আফগানিস্তান ছাড়ার আগে তারা ‘তালেবানের ওয়াদার বাস্তবায়ন’ দেখতে চায়।
আফগান প্রেসিডেন্টকে পাঠানো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এখন ৯০ দিনের ‘সংঘর্ষ বন্ধ’ দেখতে চায়। তারা এই শান্তি প্রক্রিয়া জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পর্যবেক্ষণ করবে।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির কাছে লেখা চিঠিতে ব্লিনকেন সতর্ক করে বলেন, এই তালেবান হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
হোয়াইট হাউস বলছে, সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার আগে তারা নিশ্চিত হতে চান যে, আফগান জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের ‘প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করছে’ বিশেষ করে সহিংসতা হ্রাস এবং সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করছে।
দেশটিতে সহিংসতার মাত্রা এখন অনেক বেশি- সাংবাদিক, অ্যাকটিভিস্ট, রাজনীতিবিদ এবং নারী বিচারকদের লক্ষ্য করে হত্যা করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আফগানিস্তানে ৯০ দিনের মধ্যে সহিংসতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নতুন আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যেন স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেন আরো অবনতি না হয়, সেজন্য জরুরি ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
জাতিসংঘকে বলা হবে, সংস্থাটি যেন এই অঞ্চলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠকে বসে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের ক্ষেত্রে তুরস্ক সম্ভাব্য স্থান হতে পারে।
এ ব্যাপারে বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিস ডুসেট বলেন, ওই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টাকে কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বিবিসির সংবাদদাতা আরো জানান, সেনা সরিয়ে নেওয়ার ফলে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা এবং আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন এড়িয়ে যেতে প্রেসিডেন্ট ঘানি এবং তালেবানদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্লিনকেন।
আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা স্থগিত থাকায় প্রেসিডেন্ট ঘানি গত শনিবার জঙ্গি সংগঠনটিকে সহিংসতা ত্যাগ করে নতুন করে আলোচনা বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন-তালিবান চুক্তিতে কী ছিল : ওই চুক্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন মূলত আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, যদি তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেটোর মিত্ররা ১৪ মাসে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।
ওই প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে যে, তালেবান তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোয় আল-কায়েদা বা অন্য জঙ্গিদের ভিড়তে দেবে না এবং তারা জাতীয় শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে।
"