আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২০ এপ্রিল, ২০২০

মাওলানা সাদ

ভারত সরকারের আস্থাভাজন থেকে যেভাবে আজ ফেরার আসামি

ভারতে তাবলিগ জামাতের প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধলভির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রকাশ্য দহরম-মহরম না-থাক, তিনি বিজেপির যথেষ্ট আস্থাভাজন বলেই পরিচিত ছিলেন। অন্য অনেক সুন্নি মুসলিম গোষ্ঠীর তুলনায় তাবলিগ জামাতের কর্মকা- হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের আমলে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় পর্যন্ত পেয়েছে।

এমন কি, গত ২৯ মার্চ রাত ২টায় দিল্লিতে তার ডেরায় হাজির হয়ে মাওলানা সাদকে যিনি মারকাজ নিজামুদ্দিন খালি করানোর ব্যাপারে রাজি করিয়েছিলেন, তিনি আর কেউ নন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও নরেন্দ্র মোদির বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট অজিত ডোভাল।

সেই মাওলানা সাদ কান্ধলভি এখন ভারতে আইনের চোখে একজন ফেরার আসামি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিল্লিতে তাবলিগের সদর দফতর মারকাজ নিজামু্দ্িদনে মার্চের মাঝামাঝি যে ধর্মীয় জমায়েত হয়েছিল, সে খবর সামনে আসার পর থেকে প্রায় তিন সপ্তাহ হলো তিনি আত্মগোপনে আছেন। দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেও তাকে এখনো খুঁজে পায়নি।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে কালপিবল হোমিসাইড বা অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে। সেদিন রাতেই ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে ‘মানি লন্ডারিং’ বা আর্থিক তছরূপের মামলা পর্যন্ত এনেছে।

পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রবল চাপের মুখে মাওলানা সাদ দিল্লি পুলিশকে অবশেষে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, তিনি তাদের তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি আছেন। এখন প্রশ্ন হলো যে ধর্মীয় নেতাকে বিজেপি সরকার পর্যন্ত রীতিমতো সম্মানের চোখে দেখত, তাদের চোখেই তিনি আচমকা কীভাবে ভিলেনে পরিণত হলেন?

আর তা ছাড়া, হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি এই মুসলিম ধর্মীয় নেতাকে সমীহই বা করত কেন? বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের একজন সিনিয়র নেতা ও জাতীয় সাধারণ সম্পাদক যার জবাবে জানাচ্ছেন, এর কারণ হলো তাবলিগ জামাতের ধর্মীয় দর্শন।

তিনি বলছিলেন, ‘প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো তাবলিগ জামাতের জন্ম কিন্তু ভারতের হরিয়ানাতেই। কিন্তু মাওলানা সাদ বা তার বাপ-দাদার নেতৃত্বে এই সংগঠন চিরকাল মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় প্রচারেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে কখনো হিন্দুদের ঘাঁটাতে যায়নি। অন্য ধর্মের লোকেদের মধ্যে ইসলামের প্রচার করাই তাবলিগে নিষিদ্ধ।’

‘অন্যভাবে বলা যায়, ভারতে অন্যান্য যে সব মুসলিম জিহাদি সংগঠন রয়েছে যেমন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বা লস্কর-ই-তইবা তাদের সঙ্গে তাবলিগের কোনো তুলনাই চলে না। তাদের কর্মকা- ধর্মীয় পরিসরেই সীমাবদ্ধ, দেশের রাজনীতি বা কূটনীতি নিয়ে তারা কখনো মাথা ঘামানোর চেষ্টাই করেনি,’ বলছিলেন তিনি।

যেমন ভারতের কাশ্মীর নীতি নিয়ে তাবলিগ নেতৃত্বের মনোভাব যা-ই হোক, তারা কখনো তা সামনে আনেননি। আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ওই ধরনের কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও তাবলিগের কখনো কোনো বড়সড় সংঘাত হয়েছে বলেও জানা নেই।

আর ঠিক এই কারণেই তাবলিগ জামাতের প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে বিজেপিও বরাবর অন্য নজরেই দেখে এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close