ডা. এম ইয়াছিন আলী

  ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব

কোমর ব্যথার সমস্যা কর্মক্ষমতা ও দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে ব্যক্তিজীবনে বিপর্যয় আনতে পারে। কোমর ব্যথার নানান কারণ থাকতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

মাংসপেশির স্ট্রেইন : অতিরিক্ত ভারী বস্তু তোলার ফলে বা ভুলভাবে বাঁকলে কোমরের পেশিতে টান পড়ে ব্যথা তৈরি হতে পারে।

ডিস্কের সমস্যা : স্পাইনাল ডিস্কের বেরিয়ে আসা বা সরে যাওয়ার কারণে স্নায়ুতে চাপ পড়ে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

আর্থরাইটিস : কোমরের জয়েন্টে প্রদাহজনিত রোগ, যেমন অস্টিওআর্থরাইটিস বা রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস কোমরের জয়েন্টে ব্যথা তৈরি করতে পারে।

স্পাইনাল স্টেনোসিস : মেরুদণ্ডের টানেল সংকুচিত হলে স্নায়ুতে চাপ পড়ে এবং কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।

ডিজেনারেটিভ বা বয়সজনিত কারণ : বয়সজনিত কারণে যেমন হাড়ের ক্ষয় হয়ে থাকে, তেমনি কোনো কোনো অংশে হাড় বৃদ্ধির কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় স্পনডালোসিস বলা হয়।

কোমর ব্যথার প্রভাব : কোমর ব্যথা একটি প্রচলিত সমস্যা। এ সমস্যা বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে কোনো না কোনো সময়ে প্রভাবিত করে। এর ব্যথার ফলে দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এটি মানুষের জীবনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন-

কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া : কোমর ব্যথার কারণে চলাফেরায় সমস্যা হতে পারে। এ অবস্থা কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।

মানসিক প্রভাব : দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে।

পেশাগত সমস্যা : কোমর ব্যথার কারণে কর্মস্থলে উপস্থিতি এবং কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।

ফিজিওথেরাপি ও কোমর ব্যথা : ফিজিওথেরাপি কোমর ব্যথার চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এর বিভিন্ন দিক হলো-

পেশি শক্তিশালীকরণ ও স্ট্রেচিং : ফিজিওথেরাপিস্টরা কোমরের পেশি শক্তিশালীকরণ এবং স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ দিয়ে রোগীর কোমরের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেন।

ম্যানুয়াল থেরাপি : কোমরের গতিশীলতা উন্নত করার জন্য স্পাইনাল ম্যানিপুলেশন, মবিলাইজেশনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

পোশ্চার কারেকশন : সঠিকভাবে বসা ও দাঁড়ানোর কৌশল শেখানো হয়, যা কোমরের অতিরিক্ত চাপ কমায়।

ব্যথা ব্যবস্থাপনা : ফিজিওথেরাপির বিভিন্ন পদ্ধতি, যেমন গরম বা ঠান্ডা থেরাপি, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

শিক্ষা ও পরামর্শ : রোগীদের কোমরের ব্যথা প্রতিরোধে সঠিকভাবে ওঠবস করা, ভারোত্তলনের নিয়ম এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপের কৌশল শেখানো হয়।

কোমর ব্যথার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। কোমর ব্যথার সমস্যা মোকাবিলায় ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক শারীরিক কৌশল এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কোমর ব্যথা মোকাবিলায় ফিজিওথেরাপির সহায়তা নিয়ে আপনি এক সুস্থ ও সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারেন।

লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ৪/এ, আ/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close