ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
নাক-কান-গলার ক্যানসারের লক্ষণ জানুন
দেশে প্রতিনিয়ত ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর পরিসংখ্যান ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতোই। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পুরুষের প্রথম ১০টি ক্যানসারের মধ্যে অন্তত চারটি এই হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
জটিল হলেও সময়মতো সঠিক চিকিৎসা হলে এবং নিয়মিত ফলোআপে থাকলে ক্যানসার থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শুরুতেই সতর্ক হলে এবং ক্যানসার খুব দ্রুত নির্ণয় করা গেলে রোগীদের পাঁচ বছরের যে সারভাইভাল, সেটি অনেক বেশি হয়। দেরিতে ক্যানসার নির্ণয় হলে ভালো কিছু হওয়ার উপায় থাকে না। মনে রাখতে হবে, হেলথ কেয়ার এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্যানসার বিষয়ে সব স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।
হেড-নেক ক্যানসার : মাথার খুলির মুখের অঞ্চল এবং গলার ভেতরে অনেকগুলো অঙ্গ আছে। যেমন নাক, সাইনাস, নাকের পেছনে ন্যাসোফ্যারিংস, মুখ, মুখগহ্বর, জিব, গলার টনসিল, শ্বাসনালি, খাদ্যনালি, থাইরয়েড গ্রন্থি, লালাগ্রন্থি। এগুলোর সমষ্টিগত ক্যানসারই হেড-নেক ক্যানসার বলে পরিচিত। হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার বলতে মানুষের মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত অন্তত ৩০টি অংশের ক্যানসারকে বোঝানো হয়। আমাদের গলার ভেতরের দিকে একটি আবরণে আবৃত থাকে মিউকাস মেমব্রেন। এর আবরণে ক্যানসারই বেশি হয়। এটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় স্কোয়ামাস সেল ক্যানসার বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা ‘প্রতিরোধযোগ্য মরণব্যাধি’ নামেও আখ্যায়িত করে থাকেন। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ নির্ণয় করা গেলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
সাধারণত ৬০ শতাংশ রোগী অ্যাডভান্স স্টেজে চিকিৎসকের কাছে যায়। অসচেতনতা, অবহেলা, রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে না জানা এবং অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে এটা হয়ে থাকে। সামান্য টিউমার ভেবে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে ধীরে ধীরে সেটি প্রাণঘাতী ক্যানসারে পরিণত হয়। কারণ, এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যথাহীন। এতে সামান্য কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়, যা প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়।
ক্যানসারের সাধারণ কিছু উপসর্গ : মুখ ও গলার ভেতরে বা বাইরে ঘা বা ক্ষত কিংবা আলসার হয়। এটি প্রাথমিক চিকিৎসা সত্ত্বেও সহজে শুকায় না, বরং দিনে দিনে বেড়ে যায়। এ ক্ষতের কারণে খাবার চিবোতে বা গিলতে কষ্ট হয় এবং পানি পান করতেও অসুবিধা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে মনে হয়, গলায় কিছু আটকে আছে। হেড-নেক আক্রান্ত অঞ্চলে ফোলা ভাব অর্থাৎ লাম্প থাকে, যাকে টিউমার বলা হয়।
মুখ-গলা এবং ঘাড়ের পেছনে ফোলা অংশ সৃষ্টি হয়। ব্যথার কারণে খাবার গ্রহণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় ও খাবার গিলতে কষ্ট হয়। জিব নাড়াতে অসুবিধা হয়। দাঁত নড়ে যাওয়া বা দাঁতে ব্যথা এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া। এই অঞ্চলের টিউমারের সঙ্গে কানে ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কানে কোনো সমস্যা থাকে না। গলার ক্যানসারের কারণে কানে ব্যথা হয়।
কর্কশ কণ্ঠ বা স্বরভঙ্গ হয়। তবে স্বরভঙ্গ হলেই ক্যানসার হবে মনে করে আতঙ্কিত হবেন না। প্রাথমিক ওষুধ খাওয়ার পরও তিন সপ্তাহের বেশি স্বরভঙ্গ থাকলে সে ক্ষেত্রে দেরি না করে নাক-কান-গলা এবং হেড-নেক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে অরুচি ও ক্ষুধামান্দ্য হওয়া। জিব অথবা মুখের ভেতরের উপরিত্বকে সাদা বা লাল ছোপ হওয়া। নাকের ক্যানসারের ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত আসা। হঠাৎ মুখের গঠনগত পরিবর্তন হওয়া। মুখ দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত। কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া। চোয়াল শক্ত হয়ে যাওয়া এবং মুখ খুলতে অসুবিধা হওয়া। গলার সামনের দিকের থাইরয়েড গ্রন্থি দীর্ঘদিন ফুলে শক্ত হয়ে থাকা।
মুখের উভয় পাশে কানের ঠিক নিচে যে লালাগ্রন্থি আছে, সেটা ধীরে ধীরে বড় ও শক্ত হয়ে গিয়ে মুখ বেঁকে যাওয়া। সেই সঙ্গে এই লালাগ্রন্থির ফোলায় ব্যথা হওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে একজন নাক-কান-গলা এবং হেড-নেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পরামর্শ দিয়েছেন : নাক-কান-গলা রোগবিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন রেজিস্ট্রার, নাক-কান-গলা এবং হেড-নেক সার্জারি বিভাগ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
"