ডা. হাসনা হোসেন আঁখি

  ১৩ জুন, ২০২৪

গর্ভবতী অবস্থায় ডেঙ্গুজ্বর হলে করণীয়

গর্ভবতীরা গর্ভাবস্থার যে কোনো সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। এ সময় ডেঙ্গু জ্বর হলে এ ভাইরাস মা থেকে ভ্রুণে ছড়াতে পারে। যদি মা আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এবং প্রসবের সময় ডেঙ্গু জ্বর হয়, তখন আরও এটি খারাপ রূপে প্রকাশিত হয়। ফলে গর্ভের শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গু হলে দ্রুত গর্ভপাত ঘটতে পারে। এর সঙ্গে প্রসবের আগে এবং প্রসবোত্তর রক্তপাত বেশি হতে পারে।

প্রিএক্ল্যাম্পসিয়া এবং এক্লাম্পসিয়া অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পর উচ্চরক্তচাপ উভয়ই থাকতে পারে। এ প্রভাবগুলো ছাড়াও ডেঙ্গু ভাইরাস মায়ের অন্যান্য অঙ্গগুলোর ক্ষতি করতে পারে। যেমন লিভার এবং কিডনিকে অকার্যকর করতে পারে, বা গুরুতর শ্বাসকষ্ট, শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা বা এআরডিএস (একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম) সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতীর অন্যান্য রোগের তুলনায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হার বেশি থাকে।

অনাগত সন্তানের শরীরে রক্ত প্রবাহ কম হবে, যদি ডেঙ্গুর কারণে মায়ের রক্তপাত বেশি হয়। এর ফলে শিশুর পুষ্টি সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে, অনাগত সন্তানটি গর্ভেই মারা যেতে পারে। জন্মের সময় ওজন কম বা ঢ়ৎবঃবৎস নধনু হতে পারে।

পরিচর্যা : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত গর্ভবতীদের তাই বেশি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ডেঙ্গুর চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্রাম, প্রচুর পানি এবং প্যারাসিটামল। হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরা ডেঙ্গুর জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। প্রয়োজনে ডেঙ্গু আক্রান্ত সব মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। মায়ের পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি এবং বাচ্চার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন এ সময় করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রক্তপরীক্ষা (এসজিপিটি, প্লেটলেট, পিসিভি), হিমোগ্লোবিন এবং হেমাটোক্রিট সঞ্চালনের পরামর্শ দেওয়া হয়। মাত্রাতিরিক্ত ডেঙ্গুর লক্ষণ বা সতর্কীকরণ চিহ্ন বারবার দেখা দেওয়ার বিষয়টি চিকিৎসকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। শুরু থেকেই রোগী ও রোগীর পরিবারকে কাউন্সিলিং করতে হবে। কারণ যে কোনো সময় রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। ডেঙ্গু শক প্রতিরোধ করার জন্য আইসিইউ প্রস্তুত রাখতে হবে।

সতর্কতা : প্রসবের সময়, বিশেষ করে গর্ভফুল আটকে যাওয়া এবং প্রসবের পর রক্তপাতের জন্য সতর্ক থাকুন। ডিআইসি এবং শক সিন্ড্রোম হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে নির্ধারিত তারিখের আগে গর্ভপাত বা সন্তান প্রসবের প্রয়োজন নেই। যে নারীরা মা হয়েছেন তারা এ সময়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার কামড় এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভবতীদের নারীবান্ধব ভ্যাকসিন বর্তমানে তৈরি করা হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত মায়েরা তাদের সন্তানদের নিরাপদে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন কারণ ডেঙ্গু ভাইরাস দুধের মাধ্যমে ছড়ায় না।

লেখক: ফার্টিলিটি কনসালটেন্ট ও গাইনোকোলজিস্ট, হার্ট বিট ফার্টিলিটি ক্লিনিক, গ্রিন রোড, পান্থপথ, ঢাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close