স্বাস্থ্য ডেস্ক

  ১৫ মার্চ, ২০২৩

যে ৬ রোগ হতে পারে ‘নীরব ঘাতক’

বেশির ভাগ রোগের ক্ষেত্রেই রোগীরা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু এমন কিছু রোগ আছে, যেগুলো শরীরে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বা নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। নীরব অবস্থায় থেকে একটু একটু করে শরীরের ক্ষতি করতে থাকে এবং যেকোনো সময় গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। এমনকি তা আকস্মিক মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে জেনে নিন ৬ নীরব ঘাতক রোগ সম্পর্কে।

উচ্চ রক্তচাপ : উচ্চ রক্তচাপ, যাকে হাইপারটেনশনও বলা হয়। চিকিৎসকরা এই রোগটিকে নীরব ঘাতক বলে থাকেন। কারণ, খুব সহজে এর উপসর্গ বোঝা যায় না, কিন্তু নীরবে হৃৎপি-ের ক্ষতি করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে কোনো বাহ্যিক লক্ষণ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। যার ফলে রক্তনালি ব্লক হয়ে গিয়ে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। ব্লাডপ্রেশারের চিকিৎসা না হলে হতে পারে নানা অসুখ। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকসহ আরো নানা গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই নিজেকে সুস্থ-সবল রাখতে নিয়মিত ব্লাডপ্রেশারের চিকিৎসা করা দরকার। হাইপ্রেশার না থাকলেও সময়ে সময়ে প্রেশার মাপান।

উচ্চ কোলেস্টেরল : উচ্চ কোলেস্টেরলকেও নীরব ঘাতক বলা হয়। এ ক্ষেত্রেও রোগীর মধ্যে সহজে কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। কোলেস্টেরলের মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে গেলেই লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। এই রোগে রক্তপ্রবাহে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল অনেক বেড়ে যায়। বাড়তি কোলেস্টেরল রক্তপ্রবাহের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা দেয়। ফলে হার্ট-সংক্রান্ত নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে।

ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস বলতে বোঝায়, রক্তে খুব বেশি গ্লুকোজ বা ব্লাড সুগার থাকা। যখন অগ্ন্যাশয় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, তখন ডায়াবেটিস হয়। শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায় ডায়াবেটিসে। এটিও একটি নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। কারণ প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস রোগের কোনো উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। শুধু যখন রোগটি বেড়ে যায়, তখন এটি ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ঘন ঘন প্রস্রাব ও তৃষ্ণা বেশি লাগার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এটি এমন একটি রোগ, যা নিঃশব্দে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

ক্যানসার : স্তন ক্যানসার, সার্ভিক্যাল ক্যানসার, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, খাদ্যনালির ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এবং ফুসফুসের ক্যানসারসহ বেশির ভাগ ক্যানসারই নীরব ঘাতক। মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছানোর পরই ধরা পড়ে।

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ : ফ্যাটি লিভার রোগ দুই ধরনের হতে পারে- নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) এবং অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এএফএলডি), যাকে অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিসও বলা হয়। এনএএফএলডি এক ধরনের ফ্যাটি লিভার, যা অ্যালকোহল সেবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আর প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল সেবনের কারণে এএফএলডি ঘটে। ফ্যাটি লিভারও খুব সহজে ধরা পড়ে না। এটি নীরব ঘাতক রোগ।

অস্টিওপোরোসিস : অস্টিওপোরোসিস হলো, এক ধরনের হাড়ের রোগ। যা টের পাওয়া যায় না সহজে। এটি কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ ততক্ষণ পর্যন্ত দেখায় না; যতক্ষণ না কোনো ফ্র্যাকচারের ঘটনা ঘটে বা রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করা হয়। এ কারণে একে নীরব ঘাতক বলা হয়। এই রোগে হাড়গুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাতে চিড় ধরতে শুরু করে। হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে। যেকোনো সময় ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি থেকে যায়। সামান্য মচকানিতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে।

ফ্যাটি লিভার : শরীরে ফ্যাটি লিভার রোগটির বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয় এবং প্রাথমিকভাবে এর কোনো উল্লেখযোগ্য উপসর্গ দেখা যায় না। এ কারণে এটি শরীরে নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। এ রোগটি হলে তার শেষপর্যায়ে সিরোসিস হতে পারে এবং যকৃতের দাগের (ফাইব্রোসিস) চূড়ান্ত পর্যায়ে হতে পারে।

স্লিপ অ্যাপনিয়া : স্লিপ অ্যাপনিয়া হলো, গুরুতর ঘুমের ব্যাধি। এই রোগে নাক ডাকার সমস্যা থাকবেই। অনেকটা নীরব ঘাতকের মতো এই রোগ। ঘুমের মধ্যেই অকালমৃত্যু হতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তির। স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীদের ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘুমের সময় শ্বাসনালি বারবার সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close