ডা. মিঞা মোহাম্মদ রুবেল
পাকস্থলীর ক্যানসার সচেতনতা মাস
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের মাথাব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ক্যানসার। কারণ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এও ক্যানসার অন্যতম। যেমন- পাকস্থলীর ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, লিভার ক্যানসার, খাদ্যনালির ক্যানসার, পিত্ত থলির ক্যানাসার, পিত্ত নালির ক্যানসার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার। এসব ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে খাদ্যে বিষক্রিয়া। খাদ্যে ভেজাল রোধ, খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে যেমন ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব, তেমনি প্রাথমিক স্তরে এ ক্যানসার নির্ণয় করতে পারলে যথোপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে তা অনেকাংশে নিরাময় করা সম্ভব। নভেম্বর হচ্ছে পাকস্থলীর ক্যানসার সচেতনতা মাস। এবার জেনে নেওয়া যাক পাকস্থলীর ক্যানসার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য-
পাকস্থলীর ক্যানসার ও বিশ্ব পরিস্থিতি : ২০২০ সালে বিশ্বে পাকস্থলীর ক্যানসার শনাক্ত হয় ১.১ মিলিয়ন, যার মধ্যে ৬০ ভাগ পূর্ব এশিয়ায় এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাকস্থলীর ক্যানসার মৃত্যু হয় ৭ লাখ ৭০ হাজার। সে হিসাবে ২০২০ সালে পাকস্থলীর ক্যানসার ছিল পঞ্চম কমন ক্যানসার এবং ক্যানসারজনিত মৃত্যুর মধ্যে চতুর্থ প্রধান কারণ। ২০২২ সালে আমেরিকাতে পাকস্থলীর ক্যানসার শনাক্ত হবে ২৬ হাজার ৩৮০ এবং পাকস্থলীর ক্যানসার মৃত্যু হবে ১১ হাজার ৯০। বর্তমানে সেখানে পাকস্থলীর ক্যানসার রোগী আছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৯২০।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি : বাংলাদেশে এ বিষয়ে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত কোনো ডেটা নেই।
কারণগুলো :
* ধূমপান
* মদ্যপান
* সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়া।
লক্ষণগুলো :
* কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে
* পেটের ওপরের অংশে ব্যথা/অস্বস্তি
* অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া
* ক্ষুধা মন্দা/অরুচি
* বমি/বমিভাব
* ওজন কমে যাওয়া
* রক্ত বমি/কালো পায়খানা
* পেটের উপরের অংশে চাকা
আশঙ্কাজনক লক্ষণগুলো :
* বমি
* রক্ত স্বল্পতা
* ওজন কমে যাওয়া
* রক্ত বমি/কালো পায়খানা
* খেতে/খাবার পর ব্যথা
* পেটের ওপরের অংশে চাকা
পরীক্ষা-নিরীক্ষা :
* পাকস্থলীর ক্যানসার নির্ণয়ের একমাত্র পরীক্ষা হলো এন্ডোসকপি।
* পাকস্থলীর ক্যানসারের এন্ডোসকপিক ভিউ
চিকিৎসা ও প্রোগনোসিস :
* ক্যানসার নির্ণয়ের পর চিকিৎসা পদ্ধতি
* এন্ডোসকপিক (EMR, ESD)
* সার্জারি
* পাকস্থলীর বাইরে ক্যানসার না ছড়ালে পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ
* কাছাকাছি অরগান/লিম্ফ নোডে ছড়ালে পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৩২ শতাংশ
* দূরবর্তী অরগান/টিস্যুতে ছড়ালে পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৬ শতাংশ
সচেতনতা মাসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
* মানুষের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
* খাদ্যাভাস সম্পর্কে সচেতন করা
* পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধ করা
* আরলি স্টেজে ক্যানসার নির্ণয়, যথোপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি
তাই লক্ষণ থাকলেই সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং উপযুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে early stage এ ক্যানসার শনাক্ত হলে যথোপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে তা অনেকাংশে নিরাময় করাও সম্ভব হবে।
লেখক : মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট, মেডিসিন
সদর হাসপাতাল, লালমনির হাট।
"