ডা, এম এম রহমান
হৃদরোগ ঝুঁকি এড়াতে যা করবেন
হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে লোভনীয় হলেও বাদ দিন বেশ কিছু খাবার। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে পারলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে। আবার কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেও রক্তে এর পরিমাণ কমে যায়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাহত করে এবং জটিল শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। প্রাণিজ খাদ্যে যেমন ডিমের কুসুম ও মাংসে কোলেস্টেরল বেশি থাকে। উদ্ভিদ জাতীয় খাবারে কোলেস্টেরল থাকে না। হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের কোনো একটি রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রক্তনালির গায়ে চর্বি জমার কারণে হার্টের রক্তনালি সরু হয়ে যায়। সরু নালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে খাদ্যতালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দিতে হবে।
কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা : কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা- এই অংশগুলোতে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। হৃদরোগী তাদের জন্য এসব বর্জনীয়
হৃদরোগীদের জন্য আরেকটি বর্জনীয় খাবার হলো চিংড়ি। ক্যালরি এবং ফ্যাট কম থাকলেও চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। সাড়ে তিন আউন্স ওজনের একপিস রান্না করা স্যামন মাছে যেখানে মাত্র ৬২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল, সেখানে একই পরিমাণ চিংড়ি মাছে পাওয়া গেছে ১৮৯ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যে উপাদানগুলো, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস হচ্ছে মাছের মাথা ও ডিম।
ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও হৃদরোগীদের জন্য ডিমের কুসুমটা এড়িয়ে চলাই উত্তম। ডিমের কুসুমে আছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। দেখা গেছে, একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে যে ১৮৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, তার পুরোটাই আছে কুসুমে। আর একজন হৃদরোগীর দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়।
খাবার যত ভাজা হয়, তার খাদ্যমান তত কমতে থাকে। এমনিতেই মাংস বা এই জাতীয় খাবারগুলোতে আছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, তার ওপর তেল যুক্ত হয়ে তার ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ে।
রেডমিট হৃদরোগের কারণ এটা নতুন তথ্য নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর এথেরোসক্লেরোসিস বা আর্টারিতে ব্লক সৃষ্টিতে এই ট্রিমাথাইলেমাইনের একটা সক্রিয় ভূমিকা আছে।
হৃদরোগের ঝুঁঁকি কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অনিবার্য। যেসব প্রাণীর বেশি পা থাকে তাদের দেহে খারাপ কোলেস্টেরল বেশি থাকে। যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি। তাই হৃদরোগের ঝুঁঁকি এড়াতে এসব প্রাণী থেকে তৈরি খাদ্য আপনার আহার তালিকা থেকে বাদ দিন। প্রতিদিন নিয়মমাফিক সুষম খাবার গ্রহণ করুন। সচেতনতাই পারে হার্ট অ্যাটাক থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।
লেখক : হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, সিইও ও চিফ কনসালট্যান্ট
মাতৃভূমি হার্ট কনসালট্যান্ট, রূপায়ন তাজ, পল্টন, ঢাকা।
"