ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার

  ১২ জানুয়ারি, ২০২২

ওমিক্রন প্রতিরোধে সতর্ক থাকুন

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ গত দুবছর ধরে বলা যায় কোভিডের মধ্যেই বসবাস করছে। কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এখন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের নতুন এ ধরনের নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন’। গ্রিক বর্ণমালা দিয়ে এর আগে যেমন আলফা ও ডেলটার নামকরণ হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই এ ধরনের এমন নাম দেওয়া হয়েছে। নতুন নাম দিয়ে সংস্থাটি ওমিক্রনকে করোনাভাইরাসের ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে, যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯। ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীদের এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হলো, মিউট্যান্ট ভাইরাসটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং এ কারণে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই তাতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হবে, আর এর ফলে কোভিড-১৯-এ গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃতের সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকবে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ওমিক্রনে পুনঃসংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে। অর্থাৎ যারা আগে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সাধারণত দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত এবং আশঙ্কা কম হলেও ওমিক্রনের ক্ষেত্রে পুনঃআক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অজস্র মানুষ এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। তারা এখন কতটা নিরাপদ তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন, সিনোভ্যাক, স্পুৎনিক- এসব ভ্যাকসিন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর তা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। আসলে ওমিক্রনসহ কোভিড নিয়ে বিজ্ঞানীরা আরো বেশি আতঙ্কে এ জন্য যে, ভবিষ্যতেও ভাইরাসটি নিজেকে প্রকৃতির বুকে টিকিয়ে রাখার জন্য আরো মিউটেশন ঘটাতে পারে। আর সে জন্য আমাদের আরো সতর্কতাসহ ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বাড়ানোর দরকার পড়বে। চীনের উহান শহরে প্রথম যে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল সেই ভাইরাস এখন আর নেই। ডেলটা আর বেটা ভ্যারিয়েন্ট তাকে হটিয়ে দিয়েছে। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন ছিল ১০টি আর বেটায় ছয়টি। আর ওমিক্রনের ‘ইউনিক’ মিউটেশনের সংখ্যা আরো অনেক বেশি, মোট ২৬টি। এতেই বোঝা যায় একে মোকাবিলা করা কত কঠিন হতে পারে। ওমিক্রন কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, সে বিষয়ে এখনো খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফলাফল পেতে আরো সময় লাগবে। সুতরাং ওমিক্রন নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। এর মধ্যে প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ মিলছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল বা করতে যাচ্ছিল, তারাও এখন নতুন করে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর জনসমাগম নিরুৎসাহিত সংক্রান্ত নানা নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে। তবে এত হতাশার মধ্যেও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং কোভিড-সংক্রান্ত সরকারি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ইয়ান সানে প্রাথমিক উপাত্ত অনুযায়ী কোভিড ভ্যাকসিনকে এখনো কার্যকর বলেই মনে করছেন। কেননা দক্ষিণ আফ্রিকায় যারা কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে গেলেও টিকা যে পুরোপুরি অকার্যকর হবে তা নয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ফুসফুসের চেয়ে কণ্ঠনালিকে বেশি আক্রান্ত করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এ গবেষণার ফলে ভাইরাসটি অন্য যেকোনো ধরনের চেয়ে কেন বেশি সংক্রামক কিন্তু কম মৃত্যুর কারণ তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। সুতরাং ঘুরেফিরে সেই একই কথা, ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে টিকা নেওয়া, মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা- এগুলোই সবচেয়ে ভালো উপায়। প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সব সময় সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close