অধ্যাপক ডা. শেখ মোহাম্মদ বাহার হোসেন

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

জ্বর হতে পারে নানা কারণে

শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া মানে জ্বর হচ্ছে। আবালবৃদ্ধবনিতা কেউই জ্বর থেকে রেহাই পেয়েছেন বলে মনে হয় না। জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গমাত্র। প্যারাসিটামল খেলে জ্বর খানিকটা উপশম হয়; কিন্তু সেরে যায় না। জ্বরের কারণ জানতে হয় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়।

একেক রোগের কারণে একেক ধরনের জ্বর হয়। তাই জ্বরের ধরন জানা আবশ্যক। কোনো কোনো জ্বর হয় অল্প দিনের জন্য। আবার কোনো কোনো জ্বর হয় অনেক দিনের জন্য। কোনো কোনো জ্বর একনাগাড়ে ভোগাতে থাকে। আবার কোনো জ্বর এখন আছে তো তখন নেই। কোনো জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি হয়, শীত লাগে, তীব্র মাথাব্যথা উঠে, বমি হয়। ইদানীং ডেঙ্গু জ্বরে হাড় কাঁপানো ব্যথা হয়। কোনো কোনো জ্বর প্যারাসিটামল ছাড়া কমানো যায় না। প্যারাসিটামলের কার্যকারিতা শেষ হলেই জ্বর বেড়ে যায়। ম্যালেরিয়া হলে জ্বরনাশক ছাড়াই দৈনিক দু-একবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে রোগী ফুরফুরে হয়ে ওঠেন। টাইফয়েড হলে আবার মইয়ের সিঁড়ির মতো দিনকে দিন লাফিয়ে লাফিয়ে জ্বর বাড়তে থাকে। তাই ডাক্তার জ্বরের ধরনটা কেমন জানতে চান। জ্বরের মাত্রা কখন কত ছিল জানতে চান। রোগী হিসেবে আপনার অথবা আপনার অভিভাবকের দায়িত্ব হলো, জ্বরের সঙ্গে এসব উপসর্গগুলো লক্ষ করা। দৈনিক চার থেকে ছয়বার জ্বরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে মেপে চার্ট তৈরি করে রাখা। আমার অনেক খারাপ লাগে, রাতে শীত লাগে, গা গরম লাগে, ঠোঁটে ফোসকা হয়- এর কোনোটাই জ্বর চিকিৎসার সঠিক মাপকাঠি নয়। বিভিন্ন সময়ের সঠিক তাপমাত্রাই বলে দেয় ওই জ্বরের কারণ কী? জ্বর মাপা কখনোই কঠিন কোনো কাজ নয়। থার্মোমিটার ঝাঁকিয়ে পারদের অবস্থান শূন্যতে নামাবেন। বগলের অথবা জিহ্বার নিচে এক মিনিট রেখে দিলে দাগাঙ্কিত স্থানে পারদের অবস্থানই আপনার রোগীর তাপমাত্রা নির্ণয় করে দেয়। আজকাল অবশ্য ডিজিটাল থার্মোমিটার তাপমাত্রার লিখিত নির্দেশ দেয়। অবশ্যই তারিখ ও সময় উল্লেখ করে তাপমাত্রার চার্ট তৈরি করে রাখবেন।

জ্বর সাধারণত রোগীর শরীরে জীবাণু আক্রমণে প্রদাহের বার্তা বহন করে। মস্তিষ্কের পর্দায় প্রদাহ হলে মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হওয়া, খিঁচুনি থেকে শুরু করে রোগী বেহুঁশও হয়ে যেতে পারেন। নাকে বা সাইনাসে প্রদাহ হলে সর্দি হবে- মাথা, কপালে বা নাকের পাশে ব্যথা হবে। টনসিলে প্রদাহ হলে গলা ব্যথা হয়, ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়। নিউমোনিয়া হলে বুকে ব্যথা হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে বুঝতে হবে মূত্রতন্ত্রে প্রদাহ হয়েছে। পাতলা পায়খানা মানে অন্ত্রে প্রদাহ। তাছাড়া রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে গেলে পুরো শরীর কিংবা সিস্টেমকেই বিকল করে দেবে। জ্বর উপসর্গ হলেও তা হয়েছে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে।

তাই জ্বরের চিকিৎসা সতর্কতার সঙ্গে ধীরস্থির মেজাজে করতে হয়। রোগী বা তার অভিভাবক জ্বরের ধরন এবং অন্য উপসর্গগুলো চিকিৎসককে জানাবেন। জ্বরের কারণে চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ হলেও জ্বর স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য রোগীকে জ্বরনাশক প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়াবেন, মাথা ধুয়ে দেবেন, জলপট্টি দেবেন। জ্বরের কারণ যাই হোক, শিশু ও বৃদ্ধদের অধিক তাপমাত্রা মারাত্মক জটিলতার কারণে হতে পারে।

লেখক : লিভার ও গ্যাস্ট্রএন্ট্রোলজি

ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

ইউনাইটেড হাসপাতাল

গুলশান, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close