ডা. মহসীন কবির লিমন

  ১৭ জুন, ২০২১

তরুণ বয়স থেকেই বার্ধক্যের প্রস্তুতি

মনে রাখতে হবে, একটি করে দিন যাচ্ছে মানে আপনি একটু একটু করে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বার্ধক্য কোনো রোগ নয়, এটি জীবনের শেষ পরিণতি। বেঁচে থাকতে হলে সবার বার্ধক্যকে বরণ করতেই হবে। জেনে রাখা ভালো, বার্ধক্য প্রথমে আসে শরীরে, আর তাই বার্ধক্যকালীন নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে তরুণ বয়স থেকেই। গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রতিটি মানুষের জীবনযাপন প্রণালি বার্ধক্যকালীন শারীরিক সমস্যায় নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। নিজের বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিতে তরুণ বয়স থেকেই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়মগুলো হলো

নিয়মিত ব্যায়াম : নবীন বয়স থেকেই নিয়মিত কিছু শারীরিক ব্যায়াম করার মাধ্যমে জয়েন্ট এবং মাংসপেশির সক্ষমতা বাড়াতে হবে ও তা ধরে রাখতে হবে।

ঘুম : বার্ধক্যে শারীরিকভাবে ফিট থাকতে নবীনদের নিয়মিত আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। কারণ শরীরের সব অঙ্গসহ মস্তিষ্কের প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় যথেষ্ট বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে। রাত না জেগে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।

খাওয়া : ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। এ জন্য নিয়মিত শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাটজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। প্রতিদিন অন্তত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।

খাবার ধরন ও সময় : আমাদের প্রতিদিনকার খাবার তালিকায় শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি উপাদান আছে কি না, তা নিশ্চিত থাকতে হবে। খাদ্যাভ্যাসেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, যারা পরিশ্রমের কাজ করেন, তাদের বেশি করে খেতে হবে ও যাদের কায়িক পরিশ্রম কম হয়, তাদের মোটেও বেশি খাওয়া যাবে না। এছাড়াও নিয়ম মেনে প্রতিদিন তিনবেলা একই সময় খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। রাতে খাবারের অন্তত দুই ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাওয়া উচিত।

পানির ব্যবহার : নিয়মিত গোসল করতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। গরম ও ঠান্ডা পানির ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। যেমন শীতের শুরু থেকেই সব কাজে গরম পানির ব্যবহার করতে হবে। ঠান্ডা পানি পান করা কমিয়ে দিতে হবে।

হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : এ রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করতে হবে। যেকোনো সমস্যায় অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের প্রবণতা কমাতে হবে। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আর এ কারণে বার্ধক্যে আপনি হালকা অসুখেই কাবু হয়ে যেতে পারেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ : শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ও শরীরে বাড়তি মেদ জমতে দেওয়া যাবে না। কারণ বার্ধক্যকালীন অতিরিক্ত ওজনের ফলে নানা ধরনের আর্থ্রাইটিসসহ জয়েন্ট, মাংসপেশি ও হাড়ের নানা রোগ দেখা দেয়।

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার : বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব। তাই এখনকার প্রজন্ম অনেকটাই প্রযুক্তিনির্ভর। তাই কম্পিউটার, মোবাইল, ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারে এ প্রজন্মকে সতর্ক হতে হবে। কারণ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না হলে তা মস্তিষ্ক, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চাপ সৃষ্টি করে। প্রযুক্তির নেশায় অনেকেই কম ঘুমায়। আর এটি ভবিষ্যতে শরীরের জন্য নানা কুফল বয়ে আনে। তাই এ বিষয়ে নবীনদের সচেতন হওয়া জরুরি।

নেশামুক্ত জীবন : নবীনদের তাদের বার্ধক্যকালীন জীবনে সুস্থতার জন্য অবশ্যই যেকোনো নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, নেশা মানুষকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তাই নেশামুক্ত জীবন গঠনে বদ্ধপরিকর হতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, প্রতিটি নাগরিকের উচিত, তার বার্ধক্যের দিকে খেয়াল রাখা ও বার্ধক্যকালীন নানা শারীরিক এবং মানসিক জটিলতা মোকাবিলায় আজ থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কারণ তরুণ ও শিশুদের পাশে সবাই থাকে। কিন্তু প্রবীণদের পাশে খুব কম মানুষই থাকে।

লেখক :

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লেখক ও গবেষক

ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন

বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close