ডা. মো. আহাদ হোসেন
গ্রোয়িং পেইনে বাচ্চাদের জন্য সতর্কতা
গ্রোয়িং পেইন সাধারণত বাচ্চাদের হয়ে থাকে। তিন বছর থেকে শুরু করে বারো বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের এই ধরনের ব্যথা হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ বাচ্চাদের এই ধরনের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে মনে রাখবেন, সঠিকভাবে নির্ণয় না হলে বা অন্য কোনো ব্যথাকে গ্রোয়িং পেইন বলে চিহ্নিত করলে অনেক সময় বাচ্চাদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আজকের লেখায় জানানোর চেষ্টা করব গ্রোয়িং পেইনের বিস্তারিত এবং কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
গ্রোয়িং পেইনের লক্ষণসমূহ
১. এ ধরনের ব্যথা সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতের দিকে দেখা যায় এবং সকালের দিকে থাকে না।
২. বাচ্চাদের গ্রোয়িং পেইন সাধারণত পায়ে অনুভূত হয় এবং উভয় পা-ই আক্রান্ত হয়। হাতে বা অন্যান্য জায়গায় এই ব্যথা খুব কমই দেখা যায়।
৩. ব্যথার তীব্রতা সাধারণত স্বল্প, মধ্যম ও কিছু সময় ক্ষেত্রে এমন তীব্র ধরনের হতে পারে যাতে রাতে বাচ্চাদের ঘুম ভেঙে যায়।
৪. এই ব্যথাটি সাধারণত সব সময় থাকে না। কিছু সময় থাকে আবার কিছু সময় থাকে না। কিছুদিন ব্যথা থাকে আবার কিছুদিন সুস্থ থাকে।
৫. কিছু কিছু বাচ্চাদের এই গ্রোয়িং পেইনের সময় পেটে ব্যথা বা মাথাব্যথার সমস্যাও থাকতে পারে।
গ্রোয়িং পেইনের কারণ
গ্রোয়িং পেইন শব্দটি শুনে মনে হচ্ছে বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে ব্যথার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আসলে বিষয়টি এ রকম নয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে ব্যথার কোনো সম্পর্ক নেই।
তার পরও যেসব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে
১. যেসব বাচ্চার পায়ে গঠনগত ত্রুটি থাকে, বাচ্চাদের পা এবং জয়েন্টসমূহ অত্যধিক অ্যাকটিভ থাকলে এই সমস্যা হতে পারে।
২. বাচ্চাদের পায়ে রক্ত চলাচল জনিত সমস্যা থাকলে।
৩. অপুষ্টিজনিত কারণে দুর্বলতা থাকলে।
৪. যেসব বাচ্চার ব্যথার সহনশীল ক্ষমতা কম থাকে।
৫. যেসব বাচ্চা পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিক চাপে থাকে।
৬. ডেকেয়ার বা পরিবার ভিন্ন অন্য কোনো তত্ত্বাবধানে থাকা বাচ্চাদের এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্র্রোয়িংয়ের ঝুঁকি বাড়ায়
১. সাধারণত প্রিস্কুল বাচ্চাদের এবং স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা এ সমস্যার ঝুঁকিতে থেকে।
২. গ্রোয়িং পেইন ছেলেদের চেয়ে মেয়ে বাচ্চাদের বেশি হয়।
৩. যেসব বাচ্চা দৌড়ঝাঁপ বেশি করে অথবা অত্যধিক অ্যাকটিভ থাকে তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন
হবেন
১. যদি গ্রোয়িং পেইন সব সময়ের জন্য বা কিছুদিনের জন্য অব্যাহতভাবে থাকে।
২. যদি সকালবেলাতেও এই ব্যথা থেকে যায়।
৩. যদি ব্যথার তীব্রতা এমন হয় যে বাচ্চার স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হচ্ছে।
৪. গ্রোয়িং পেইন যদি বাচ্চার জয়েন্টসমূহের অনুভূত হয়।
৫. এইটা তার সাথে যদি আঘাতজনিত কোনো সমস্যায় জড়িত থাকে।
৬. এই ব্যথার সঙ্গে যদি জ্বর, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া এ জাতীয় সমস্যা থাকে।
বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো বিশেষ কারণ না থাকে তাহলে গ্রোয়িং পেইন কিছুদিন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। তবে বাসায় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে যাতে করে বাচ্চাদের আরাম বোধ হয়। রাতে বাচ্চাদের পা এবং হাত হালকা ম্যাসাজ করে দেওয়া যেতে পারে। ব্যথাযুক্ত জায়গাগুলোতে গরম কাপড় বা গরম পানির বোতল দিয়ে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। ব্যথা যদি আরো বেশি হয় বা কষ্টদায়ক হয় সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খাওয়া যেতে পারে। হাত ও পায়ের কিছুই স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ আছে যেগুলো চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত করা এই ব্যথার ক্ষেত্রে ভালো উন্নতি এনে দেয়।
শেষ কথা
গ্রোয়িং পেইন বাচ্চাদের জন্য খুব একটা সমস্যার বিষয় নয়। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে এই ব্যথা নিয়ে সচেতন না থাকলে অনেক সময় সেটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় পরিণত হতে পারে। বাচ্চাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা কষ্টকর। তাই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য গ্রোয়িং পেইন সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারলে অনেক ব্যথাই নির্মূল করা সম্ভব। ভালো থাকুক আমাদের বাচ্চারা।
লেখক :
কনসালট্যান্ট ও পেইন ফিজিশিয়ান
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
"