ডা. দিদারুল আহসান

  ২৪ মার্চ, ২০২১

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ

এ দেশে যে কটি চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে ঘামাচির পরই ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। গরমকালে এ রোগটি বেশি হয়। কারণ গরমকালে বেশি ঘাম হয় এবং শরীর ভেজা থাকে। ঘাম ও ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর জন্য উপযোগী। তবে যারা এয়ারকুলার ব্যবহার করেন তাদের ঘাম হয় না। রোগটিও তাদের ক্ষেত্রে কম হয়। যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ততটা সজাগ নন, তাদের এ রোগটি বেশি হতে দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ লোক এ রোগে আক্রান্ত হন। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এ রোগে আক্রমণের হার শীতপ্রধান দেশের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ হাজার লোক প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

আমাদের দেশে ছত্রাকজনিত প্রধান দুটি চর্মরোগ হলো দাউদ ও ক্যানডিডিয়াসিস। আসুন জেনে নিই এ রোগ দুটি সম্পর্কে জরুরি কিছু তথ্য

দাউদ : দাউদ দেহের যেকোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। যে স্থানে দেখা যায়, সেই স্থানে গোলাকার চাকার মতো দাগ দেখা যায়। যার মধ্যখানের চামড়া প্রায় স্বাভাবিক আকারে দেখতে হলেও গোল দাগের পরিধিতে ছোট ছোট পুরো দেখা যায়, এ দাগের পরিধিতে উঁচু বর্ডার লাইন আকারে থাকে এবং চুলকালে সেখান থেকে কষ ঝরতে থাকে।

শরীরের যেকোনো স্থানে এর আক্রমণ ঘটতে পারে। তবে দেখা গেছে, তলপেট, পেট, কোমর, নিতম্ব, পিঠ, মাথা, কুঁচকি ইত্যাদি স্থান বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রমণের স্থান লক্ষ করে একে স্থানভিত্তিক বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন মাথায় যখন ডার্মাটোফাইটজাতীয় ছত্রাকের আক্রমণ হয়, তখন তাকে বলা হয় টিনিয়া কেপিটিস। ঠিক তেমনিভাবে যদি পায়ে হয় তখন বলা হয় টিনিয়া পেডিস ক্রুরিস, হাতে হলে বলা হয় টিনিয়া ম্যানাস, নখে হলে তাকে বলা হয় টিনিয়া আঙ্গুয়াম, শরীরের অংশবিশেষ আক্রান্ত হলে বলা হয় টিনিয়া করপোরিস।

ক্যানডিডিয়াসিস : এটি একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন শিশু, বৃদ্ধ কিংবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে যারা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন কিংবা যাদের ত্বকের খাঁজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে, তাদেরই এ রোগটি বেশি হয়। যারা সব সময় পানি নাড়াচাড়া করেন, তাদের আঙুলের ফাঁকে, হাতের ভাঁজে, শিশুর জিহ্বায়, মহিলাদের যোনিপথে এবং গর্ভবতী মহিলারা এতে বেশি আক্রান্ত হন। ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে প্রচুর চুলকানি থাকে।

রোগ নির্ণয় : আক্রান্ত স্থানে চামড়া একটু ঘষে তুলে নিয়ে একটি গ্লাস স্লাইডের ওপর রাখতে হবে। মাইক্রোস্কোপের নিচে এটা যে ফাংগাশ বা ছত্রাক তা খুব সহজেই নিরূপণ করা সম্ভব।

চিকিৎসা : চিকিৎসা নির্ভর করে আক্রমণের স্থান ও আক্রমণের তীব্রতার ওপর। ক্যানডিডিয়াসিসের ক্ষেত্রে কেটোকোনাজল ও ফ্লুকোনাজল ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। ছুলির ক্ষেত্রে একই ওষুধ ব্যবহার করতে হয় এবং দাউদের ক্ষেত্রে গ্রাইসিফুলভিনসহ ওপরে উল্লিখিত দুটি ওষুধের যেকোনো একটি ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close