ডা. মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল)
হেপাটাইটিস-সি
হেপাটাইটিস-সি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। কিন্তু ভাবনার বিষয় এই যে, আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে হেপাটাইটিস-সি’তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাই আমাদের সবারই এ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। আসুন জেনে নিই হেপাটাইটিস-সি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
কীভাবে ছড়ায় : হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস মূলত ছড়ায় রক্তের মাধ্যমে। দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বে অনেকেই নিজেদের অজান্তে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া একই শেভিং রেজার, ব্লেড কিংবা ক্ষুর ব্যবহারের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে অথবা গর্ভস্থ শিশুর হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। সামাজিক মেলামেশা যেমন হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি এবং রোগীর ব্যবহার্যসামগ্রী যেমন গ্লাস, চশমা, তোয়ালে, জামাকাপড় ইত্যাদির মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায় না।
রোগের লক্ষণ : শরীরে একবার হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস প্রবেশ করলে তা শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে লিভারে স্থায়ী ইনফেকশন তৈরি করে, যাকে আমরা বলে থাকি ক্রনিক হেপাটাইটিস-সি। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। অথচ ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে তাদের প্রায় অর্ধেকই লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন, যাদের অনেকেরই পরবর্তী সময়ে লিভার ক্যানসার দেখা দেয়।
চিকিৎসা : চিকিৎসায় হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস ৭০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই নিরাময়যোগ্য। এ রোগের অন্যতম প্রধান ওষুধ পেগাসিস উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পাওয়া যায় আর অন্য ওষুধ রিবাভিরিন তো এখন এ দেশেই তৈরি হচ্ছে। আর তাই প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তির উচিত শরীরে হেপাটাইটিস-সি’র জীবাণু আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া আর থাকলে দ্রুত লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া। মনে রাখতে হবে, হেপাটাইটিস-সি একটি নীরব ঘাতক, সঠিক সময় চিকিৎসা না করলে এটিই হতে পারে অকালমৃত্যুর কারণ। তাই আমাদের হেপাটাইটিস ‘সি’ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
লিভার ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
"