ডা. সাব্বির মুহাম্মদ শাওকাত

  ২১ জানুয়ারি, ২০২০

শ্বেতিরোগ ছোঁয়াচে নয়

শ্বেতিরোগের আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানার আগে এ সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। শ্বেতি হচ্ছে কালো রঞ্জক প্রস্তুতকারী বহিঃত্বকের মেলানোসাইটের অনুপস্থিতিজনিত চর্মের বর্ণের এক ধরনের অস্বাভাবিকতা, যার কারণে শরীর ও শ্লেষ্মাঝিল্লির বিভিন্ন স্থানে দুগ্ধধবল সাদা সাদা দাগ সৃষ্টি হয়। তবে সাদা দাগ হলেই যে সেটা শ্বেতিরোগ হবে, তা কিন্তু নয়।

শরীরে বিভিন্ন স্থানে নানা চর্মরোগও সাদা সাদা দাগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। যেমন মরকিয়া, লাইকেন স্কেরোসাস, পিট্রিয়াসিস এলবা, সোদ বা পিট্রিয়াসিস ভার্সিকলর, পিন্টা, কুষ্ঠরোগ, রাসায়নিক লিউকোডার্মা, এলবিনিজম পিবালডিজম, লিভাস এনেমিকাস ইত্যাদি। আবার সাদা হলেও যে শ্বেতিরোগ হবে না, তা কিন্তু নয়। শ্বেতিরোগ উজ্জ্বল সাদা বা চকের মতো ধবধবে সাদা বর্ণের হয় এবং এটি স্বাভাবিক বর্ণের চামড়া থেকে সুস্পষ্ট সীমারেখায় পৃথক থাকে। চামড়ার সাদা অংশে কোনো ধরনের আঁশ বা চর্মের গড়ন, গঠন ও পুরুত্বে অস্বাভাবিক থাকে না, তবে সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণের সাহায্যে এ রোগের প্রকৃতি, বিস্তৃতি, বর্ণ ও আনুষঙ্গিক বৈশিষ্ট্য দেখে একজন অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ খুব সহজেই এ রোগ নির্ণয় করতে পারেন। ক্ষেত্রবিশেষে উডস ল্যাম্প পরীক্ষা এবং চর্ম বায়োপসির প্রয়োজন হয়।

কুসংস্কার আছে, শ্বেতি ছোঁয়াচে রোগ। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। একজন শ্বেতি রোগীর স্পর্শ অন্যকে এ রোগে আক্রান্ত করে না।

শ্বেতিরোগ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা অথবা মায়ের শ্বেতি থাকলে তার সন্তানদের এ রোগ হওয়ার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা আছে, তবে তা একটিমাত্র জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে বহু জিন বা বংশগতির ধারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একজন শ্বেতি রোগীর ৩০ ভাগ আত্মীয়স্বজনের শ্বেতিরোগ থাকতে পারে, তবে বাবা বা মায়ের শ্বেতি থাকলেই সন্তানের হবেÑ এমন শতভাগ সম্ভাবনা নেই। এ রোগটিতে পুরুষ ও মহিলা সমহারে আক্রান্ত হয়।

শ্বেতি কেন হয়, তা অদ্যাবধি গবেষকরা আবিষ্কার বা অনুসন্ধান করতে পারেননি। চামড়া কালো রং উৎপাদক বহিঃত্বকস্থিত কোষ মেলানোসাইটের স্থায়ী ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এ দৃষ্টিকটু সাদা দাগের সৃষ্টি; কিন্তু কেন এ কোষের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু, তার কারণ জানার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

শ্বেতিরোগের সঙ্গে কিছু কিছু অভ্যন্তরীণ রোগের সহাবস্থান থাকতে পারে, যেমন টাইপ এক বহুমূত্র রোগ, চোখের রোগ, পারনিসিয়াস এনিমিয়া থাইরয়েড, এডিসনস ডিজিস, এলো পোসিয়া এরিয়াটা ইত্যাদি। এ কারণে শ্বেতি রোগী কোনো চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে তিনি ক্ষেত্রবিশেষ উল্লিখিত অভ্যন্তরীণ রোগগুলো আছে কি না, তা শারীরিক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে নির্ণয় করে থাকেন।

সূর্যের আলো থেকে শ্বেতি রোগীদের সাবধানে থাকা উচিত; কেননা শ্বেতি রোগীর সাদা স্থানে সূর্যের অতি বেগুনিরশ্মি প্রতিরোধক কালো রঞ্জক না থাকায় এ স্থানগুলো এ রশ্মির প্রতি অতি সংবেদনশীল থাকে, ফলে সূর্যালোকের সংস্পর্শে সহজেই চামড়ার এ স্থান (শ্বেত স্থান) পুড়ে যেতে পারে। তাই সব শ্বেতি রোগীর সানস্কিন লোশন ব্যবহার করা উচিত। মনে রাখতে হবে, এ রোগটি সৌন্দর্যহরণ ব্যতীত শরীরের তেমন ক্ষতি করে না। আর খাবারের সঙ্গেও শ্বেতিরোগের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই টক, দুধ, ডিম বা অন্য কোনো খাবারে এ রোগ বৃদ্ধি করে না।

লেখক :

কনসালট্যান্ট ও কসমেটিক সার্জন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

অরোরা স্কিন অ্যান্ড এসথিয়েটিকস

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close