সালাহ উদ্দিন বাবর

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর ট্রাফিক পুলিশ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়ে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো। তিন দিনের মাথায় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় নানা টানাপড়েনের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় সড়কেও শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপরতা শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশ। সেজন্যই ট্রাফিক সার্জেন্টদের হাতে অস্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ড. ইউনূসের সরকার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত ৬ মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি ও অপহরণ বেড়ে গেছে। চলতি বছরের শুরুর মাস জানুয়ারির ৩১ দিনে দেশে প্রতিদিন একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট, মাঠ, নদী, খাল-বিল, ঝোপ-জঙ্গল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বেড়েছে সড়কে দুর্ঘটনা। রাজধানীর সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক সার্জেন্ট-পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ও অবৈধ আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছেন ডিএমপি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা জোরদার করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৬০৭৫টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এছাড়া অভিযানকালে ৫২৯টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মেগাসিটি ঢাকার প্রায় ২ কোটি মানুষের জন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রয়েছেন প্রায় ৪ হাজার। রাজধানীর ৩৩৯টি পয়েন্টে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্য। ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে ছিনতাই-চুরির মতো সড়কে ঘটে চলা নানা অপরাধ দমন ও শৃঙ্খলায় এবার ট্রাফিক সার্জেন্ট ও টিআইদের দেওয়া হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। সীমিত ট্রেনিং শেষে ট্রাফিক পুলিশের হাতে অস্ত্র দেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ঢাকার সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এর সঠিক বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, গুলি চালাতে অদক্ষ ট্রাফিক পুলিশের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ায় সড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উল্টো শঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া ছিনতাইকারীকে গুলি করার কোনো বিধান নেই। প্রয়োজনে তাকে প্রতিহত করতে হলে অবশ্যই গুলি করতে হবে পায়ে। কিন্তু সীমিত অনুশীলনের মাধ্যমে এত নিখুঁতভাবে গুলি চালানো সহজ হবে না। এজন্য তারা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের এ কাজে নিয়োজিত করার দাবি জানান।

ডিএমপি সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে পুলিশের কার্যক্রম একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। এখন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। পুলিশকে সক্রিয় ও বিট পুলিশিংকে চাঙ্গা করা হচ্ছে। দৃশ্যমান করার চেষ্টা চলছে টহল পুলিশের কার্যক্রমও। তবে এসব চেষ্টার মধ্যেই একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তাই সড়কে দায়িত্ব পালনের সুবাদে ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধ দমনে ট্রাফিক পুলিশের কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারীদের প্রতিহতও করছেন। তবে তাদের হাতে অস্ত্র না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে হামলার শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সড়কের দৃশ্যমান ও গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে দায়িত্ব পালন করা নিরস্ত্র ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা অনেক বেশি ঝুঁকিতে পড়েন। এজন্য সীমিত অনুশীলন শেষে সার্জেন্টদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে। ডিউটির শুরুতে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ এবং ডিউটি শেষে তা জমা দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার বলেন, সড়কের চুরি-ছিনতাইকারীর কবলে পড়া ভুক্তভোগীরা প্রথমেই ট্রাফিক বক্সে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতা চান। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও ধাওয়া করে ছিনতাইকারীদের ধরে ফেলছেন বা প্রতিহত করছেন। কিন্তু নিরস্ত্র ট্রাফিক পুলিশদের ওপরও অনেক সময় অস্ত্রধারী এসব ছিনতাইকারী হামলা করে বসে। সেক্ষেত্রে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য ট্রাফিক সার্জেন্ট ও টিআইদের সীমিত অনুশীলন শেষে অস্ত্র দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই দায়িত্বরত সার্জেন্ট ও টিআইদের সীমিত অনুশীলন শেষে অস্ত্র দেওয়া হবে। এতে ঢাকার সড়কে ঘটা অপরাধগুলো অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সীমিত অনুশীলন শেষে ট্রাফিক সার্জেন্টদের দেওয়া অস্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close