নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের একুশ ও দেশে দেশে ভাষার লড়াই

ভাষা মানুষের মনের ভাব বিনিময়ের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। মানবসমাজে ভাষাকে বলা হয় মূল্যবান এক উপহার। এ মূল্যবান উপহারের মধ্যে আরো মূল্যবান হলো ‘মাতৃভাষা’। মাতৃভাষায় ভাব বিনিময় যে কত মধুর তা কখনো লেখনীতে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মাতৃভাষার সম্মান রাখতে গিয়ে দেশে দেশে লড়াই-সংগ্রাম কম হয়নি। সেসব লড়াইয়ের মধ্যে বাঙালির আত্মদান পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে এবং থাকবে। বাঙালি তাদের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মর্যাদাবান করতে রক্ত ঝরিয়েছে, জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে আত্মত্যাগের মহান ইতিহাস। যে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় নতুন একটি জাতিরাষ্ট্র-স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ভাষা আন্দোলের প্রচলিত বয়ানে একটি ভুল তথ্য আমাদের বাচ্চাদের, ছাত্রদের শেখানো হয়, পত্র-পত্রিকার সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় পাতায়ও লেখা হয়- পৃথিবীতে বাংলাদেশের বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যারা আপন মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এবং বুকের রক্ত ঝরিয়েছে। সঠিক তথ্য হলো- পৃথিবীর আরো অনেক জাতি ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঝরিয়েছে এবং জীবন দিয়েছে। ভারতের আসাম প্রদেশেও বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন ১১ জন। তামিলনাড়ুতে তামিল ভাষার জন্য যে রক্তপাত ঘটেছে, তা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। নিঃসন্দেহে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির আত্মত্যাগ পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য। কিন্তু একমাত্র জাতি হিসেবে যে প্রচার-প্রচারণা তা অনেকাংশেই অতিশয়োক্তি।
ভাষা নিয়ে কিংবা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর নানা জায়গায় সংগ্রাম হয়েছে, মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে। প্রথমেই আমরা চোখ দিতে পারি, আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে দিকে। ভারতের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেশটির স্বাধীনতারও আগের। ১৯৩৭ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির স্থানীয় কংগ্রেস সরকার স্কুলে হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে ভাষা নিয়ে প্রথম আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৩৯ সালে দুই আন্দোলনকারী পুলিশি হেফাজতে মারা গেলে আন্দোলন চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। অবশেষে তুমুল প্রতিবাদের মুখে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি সরকার হিন্দিকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে পড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
৬৫১ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের বিজয় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খলিফা ওমরের আমলে আরব সেনাপতিরা পারস্য (ইরান) দখল করেন। ইরানে বিকাশ লাভ করে ইসলাম ধর্ম। আরব শাসকরা ইরানে চালু করেন আরবি সংস্কৃতি ও সামাজিক বিধিবিধান। তারা পারস্যের রাজভাষা পার্সির পরিবর্তে আরবিকে শাসন কাজ পরিচালনা এবং শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইরানের মানুষ তা মেনে নেননি। ইরানি প্রতিবাদকারীদের ওপর চালানো হয় জুলুম ও হত্যাযজ্ঞ। ইরানিরা আরবি ভাষাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ প্রতিবাদ ও সংগ্রামে হাজার হাজার ইরানিকে প্রাণ দিতে হয় আরবি শাসকদের ফাঁসিকাষ্ঠে।
"