নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

খাল সংস্কার উদ্বোধনে লালগালিচা

দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা * লাল কার্পেটসদৃশ ম্যাট নিরাপত্তার জন্য -ব্যাখ্যা উত্তর সিটির

আগামী বর্ষার আগেই রাজধানী ঢাকার ১৯টি খালে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বর বাউনিয়া খালের মাধ্যমে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির আওতাধীন ৬টি খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশন খাল সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উদ্বোধন করতে তিন উপদেষ্টা যে পথে যান, সেখানে বিছানো ছিল লালগালিচা (কার্পেট)। ওই গালিচা বিছানো পথে হেঁটে তারা বাউনিয়া খালের খননকাজ শুরুর মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ছয়টি খালের সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন। সরেজমিন দেখা যায়, দুই সিটির আওতাধীন ছয়টি খালের সংস্কারকাজ শুরুর জন্য মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনে রূপসী প্রো-অ্যাকটিভ ভিলেজ আবাসিক এলাকার বাউনিয়া খালসংলগ্ন রাস্তায় একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ওই তিন উপদেষ্টাসহ অন্য কর্মকর্তারা বাউনিয়া খালের পাড়ে যান। এর আগেই খালে একটি ভাসমান খননযন্ত্র (ফ্লোটিং এক্সকাভেটর) এনে রাখা হয়। খালের পাড় থেকে ভাসমান ওই খননযন্ত্রে যেতে অস্থায়ী একটি পথ তৈরি করা হয়। ওই পথে বিছানো ছিল লাল রঙের একটি কার্পেট। তিন উপদেষ্টাসহ অন্য কর্মকর্তারা ওই পথে হেঁটে খালে থাকা ভাসমান খননযন্ত্রের ওপরে যান। উপদেষ্টারা খননযন্ত্রে ওঠার পর যন্ত্রটি চালু করে খালের খননকাজের উদ্বোধন করা হয়। উপদেষ্টাদের নিয়ে খাল থেকে কয়েকবার যন্ত্রের সাহায্যে খনন করা মাটি পাড়ে ফেলা হয়।

খননকাজ শুরু হওয়ার পর তিন উপদেষ্টাসহ অন্যরা খননযন্ত্র থেকে পাড়ে নেমে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় এক গণমাধ্যমকর্মী পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে একটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল, ‘আগে দেখতাম মেয়ররা এমন ধুমধাম করে উদ্বোধন করতেন। সেখানে হয়তো লালগালিচা থাকত না। কিন্তু আজকে দেখলাম আপনারা খালেই নামলেন লালগালিচার ওপর দিয়ে।’ এ বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ওই সাংবাদিককে হেসে উত্তর দিয়ে বলেন, ‘ওটা তো অবশ্য আমি দেখিনি। ওটা অবশ্য আমি খেয়াল করিনি, আপনি খেয়াল করেছেন?’

উত্তর সিটির ব্যাখ্যা : খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খালের পাড় থেকে খননযন্ত্র পর্যন্ত ‘লালগালিচা’ বিছানোর ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তারা বলছে, এটা কোনো ধরনের অপব্যয় বা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নেই। শুধু পিচ্ছিল পথে নিরাপত্তার জন্য লাল রঙের ‘কার্পেটসদৃশ ম্যাট’ ব্যবহার করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি ব্যাখ্যায় বলেছে, অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ভাসমান খননযন্ত্রে যেতে লাল কার্পেট বিছানোর কারণ কী? এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানায়, যেখানে ভাসমান খননযন্ত্র রাখা হয়েছে তা কোনো স্থায়ী পন্টুনে স্থাপিত নয়, বরং একটি অস্থায়ী স্থানে রাখা হয়েছে। খননযন্ত্রে ওঠার রাস্তাটি অনেক ঢালু ও কাদা মাটি। খননযন্ত্রের মেঝে পিচ্ছিল। অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য এবং চলাচল এলাকা দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে একটি লাল রঙের কার্পেটসদৃশ ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে। উত্তর সিটি আরো বলেছে, তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করেছে, উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথিরা লালগালিচায় হেঁটে খালে নামেন এবং ভাসমান খননযন্ত্রে উঠে কাজের সূচনা করেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে। এটি কোনো আনুষ্ঠানিক লালগালিচা নয়, বরং শুধু নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা একটি ব্যবস্থা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close