নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পূর্ব পাকিস্তানবাসীর ভাষা সংগ্রামের সূচনার কথা

১৯৪৭ সালে ভারতের বিভক্তির পর ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও শুধু ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান দুটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও সিভিল সার্ভিস, মিলিটারি ও গুরত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় পদে তাদের আধিপত্য ছিল। ক্রমে তারা নিজেদের শাসনকর্তা ও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে প্রজা ভাবতে শুরু করে দেন।

নবগঠিত রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তারা উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় ‘তমদ্দুন মজলিসের’ সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এক প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং সভায় বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয় এবং এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৭-এর ডিসেম্বর মাসে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। তারপরও পাকিস্তানের শাসকদের ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। পাকিস্তান সরকারের

বিভিন্ন স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের কারণে আবারও সোচ্চার হয়ে উঠে বাঙালিরা।

১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে পুনরায় মিছিল করা হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী গোলাম মাহাবুব, অলি আহাদ, শওকত আলী ও সামসুল হক গ্রেপ্তার হন। তারপর ২১ মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দৃঢ়ভাষায় ঘোষণা করেন ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। আবারও সোচ্চার হয়ে ওঠেন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। এমন সিদ্ধান্ত কখনো মানব না- এ দাবি ওঠে সারা প্রদেশে। ছাত্র-শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এ দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। এভাবে আরো ৪ বছর অতিবাহিত হয়, তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র থামেনি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলা ও শাসকদের একদেশদর্শী আচরণের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন জনগণের মনে আরো শক্ত করে শিকড় গাড়তে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close