নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের ছেলে ইউক্রেনে গিয়ে ড্রোন হামলায় লাশ

সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে জমিজমা বিক্রি ও ধারদেনা করে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন নাটোরের হুমায়ুন কবির (২৮) এবং তার ভগ্নিপতি রহমত আলী (৪০)। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে এবং উচ্চ বেতনের প্রলোভনে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যোগ দেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। সম্প্রতি ড্রোন হামলায় নিহত হন হুমায়ুন কবির। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের মরহুম মহসিন আলীর ছেলে। তার মৃত্যুতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবার।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার যুবক হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী ভালো বেতনের চাকুরির আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমান। তাদের পরিবার ১৮ লাখ টাকা খরচ করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাশিয়ায় পাঠায়। প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব, তারপর ট্যুরিস্ট ভিসায় রাশিয়ায় নেওয়া হয় তাদের।
সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের বাধ্য করা হয় যুদ্ধে অংশ নিতে। কিন্তু হাসান নামে এক দালালের খপ্পরে পড়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হন। প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতনের প্রলোভন দেখানো হয়। সম্প্রতি ড্রোন হামলায় হুমায়ুন কবির প্রাণ হারানোর পর দুলাভাই রহমত আলীও ফিরতে চান দেশে। এদিকে একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে মা কারিমুন বেগমের চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। জামাইকে ফিরে পেতে চান তিনি। গত ২৬ জানুয়ারি রাতে ছেলের মৃত্যুর খবর পায় তাদের পরিবার। মায়ের দাবি, অন্তত ছেলের মরদেহ যেন তিনি শেষবারের মতো দেখতে পারেন।
এদিকে স্বামীকে হারিয়ে এক বছরের মেয়ে প্রীতিকে নিয়ে এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন হুমায়ুনের স্ত্রী তারা বেগম। কোলের শিশুটি বুঝতে পারছে না মায়ের কান্নার কারণ। তারা বেগম সংশ্লিষ্ট দালালদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি আরো জানান, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য হুমায়ুন বিদেশে পাড়ি জমান। দালাল তাদের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে। উচ্চসুদে ঋণ করে ও জমি জমা বিক্রি করে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এখন সেই ঋণের টাকা কি করে শোধ করবেন তিনি।
হুমায়ুুনের বড় বোন মেঘনা বেগম ও বন্ধু মাহমুদ জানান, দালালের খপ্পরে পড়ে তাদের পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি ইমোর মাধ্যমে হুমায়ুন ও রহমতের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, তাদের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। এরপর ২৬ জানুয়ারি রহমত জানায় হুমায়ুনের মৃত্যুও খবর। পরিবারের সদস্যরা এবং এলাকাবাসী সরকারের কাছে মরদেহ ফেরত আনার দাবি জানান। হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সহসভাপতি শাকিল আহম্মেদ তপু? বলেন, ঘটনাটি জানার পর থেকেই তারা পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং হুমায়ুুন কবিরের মরদেহ এবং রহমত আলীকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
স্থানীয় দালালদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। আর ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড কোম্পানিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি। এ ব্যাপারে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীর কাছ থেকে তিনি জেনেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত তাকে মৌখিক বা লিখিতভাবে জানায়নি। এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
"