নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

আমরা রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চাই না : সিইসি

নির্বাচন কমিশন রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চায় না মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা করা সময়সীমা মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপির) পক্ষ থেকে ইসিকে ল্যাপটপ ও স্ক্যানার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রাথমিকভাবে ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০ ডকুমেন্টস স্ক্যানার ও ৪৩০০ ব্যাগ দিয়েছে ইউএনডিপি। বিএনপির পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্টের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের যে দাবি জানানো হয়েছে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, ‘আমরা রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চাই না। আমরা আইনকানুন, বিধিবিধান, সিস্টেমের মধ্যে থাকব।’ সিইসি আরো বলেন, ‘আমরা ফ্রি, ফেয়ার গেম উপহার দিতে চাই। অল প্লেয়ারস ক্যান পে আন্ডার দ্য রুলস অব দ্য গেম- এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে চাই।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত যে সময়সীমা (টাইমফ্রেম), ওইটাকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।’ বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। সিইসি জানান, সোমবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজ শুরু হবে। ভোটার তালিকা নিয়ে সংশয় দূর করার ব্যাপারে ইসি আশাবাদী জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ছয় মাসের মধ্যে হালনাগাদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করব।’ ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় কাজ করবেন ৬৫ হাজার কর্মী।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। নিবন্ধন কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। দেশব্যাপী এ কার্যক্রমে অংশ নেবেন নির্বাচন কর্মকর্তা, সুপারভাইজার ও মাঠ কর্মকর্তারা। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। হালনাগাদ কার্যক্রমে ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ব্যাগসহ অন্য উপকরণ বা সরঞ্জাম দিয়ে ইসিকে সহায়তা করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে অংশ নিতে ৬৬ হাজার লোকবল প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এছাড়া উপজেলা অথবা থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারের নাম বাদ ও নতুন ভোটারের তথ্য সফটওয়্যারের সাহায্যে ডেটা এন্ট্রি ও ডেটা আপলোড করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছিলেন, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভোটার তালিকা থেকে মৃতদের বাদ দেওয়া হবে। ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি নতুন ভোটারদের তালিকায় যুক্ত করা হবে। এরপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ওই বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা করবে ইসি।

সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯৩২ জন। আগেই ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করাই বর্তমান কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। ভোটার হওয়ার যোগ্য, বিশেষ করে নারী ও তরুণ প্রজন্মের কেউ যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। তথ্য গোপন করে একাধিক স্থানে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করাকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। কমিশন মনে করে, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে গোপনে ভোটার হওয়া সম্ভব নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close