প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি শুরু
গাজা পুরোটাই ধ্বংসস্তূপ তবু ফিরছেন উদ্বাস্তুরা
১৫ মাসে ৪৬ হাজার ৯১৩ জনের প্রাণহানি * আহত হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বসবাসযোগ্য ঘরবাড়ি বলতে কিছু নেই, সবই ধ্বংসস্তূপ। টানা ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় পুরো গাজা পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ায় সেই বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই ফিরছেন উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিনিরা। গতকাল রবিবার গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টায় বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগ মুহূর্তে ইসরায়েলি হামলায় ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪৬ হাজার ৯১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজিদ আল-আনসারি এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার তথ্য জানান। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলের কাছে তিন জিম্মিকে তুলে দেওয়া হবে। তারা তিনজনই ইসরায়েলি নাগরিক। অন্যদিকে ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়বে ইসরায়েল। তিন জিম্মির নাম প্রকাশ করেছেন হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জেদিন আল কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা। তিনি বলেন, চুক্তির শর্তানুযায়ী আমরা আজ তিনজনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারা হলেন রোমি গোনেন, এমিলি দামারি ও দোরোন স্টেইনব্রিচার।
চুক্তি অনুযায়ী, গাজায় স্থানীয় সময় রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। কয়েক ঘণ্টা বিলম্বের পর তা কার্যকর হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় রবিবার সকালে ৩ ঘণ্টা বিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেয়। শনিবার ভোরের দিকে ইসরায়েলের জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন পায়। এর আগে শুক্রবার ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দিনেই হামাস ৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, তার বিনিময়ে ইসরায়েলও তাদের জেলে আটক ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও ছাড়তে হবে, আর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। এ সময়ে প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে তেলআবিব।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। এ ধাপেই মুক্তি পাবে পুরুষ ইসরায়েলি সেনারা। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন, যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর। তবে হামাস জানায়, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী না হলে এবং ইসরায়েলি বাহিনী গাজা না ছাড়লে তারা প্রথম ধাপের পর আর কোনো জিম্মিকে ছাড়বে না। চুক্তির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, প্রথম ধাপে যে জিম্মিরা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের মধ্যে বেসামরিক নারী, শিশু, নারী সেনা, বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত বেসামরিকরা রয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় আড়াইশ’ জনের বেশি মানুষকে। তাদের মধ্যে অনেককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের হামলার দিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এ হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৯১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকাটির ২১ লাখ বাসিন্দাকে হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত।
যুদ্ধবিরতির বিরোধিতায় ইসরায়েলের ৩ মন্ত্রীর পদত্যাগ : গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভিরসহ তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করা ইতামার ইসরায়েলের কট্টর জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় দল জিউইশ পাওয়ার পার্টির নেতা। তার দলের আরো দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে। জিউইশ পাওয়ার পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আর ক্ষমতাসীন জোটের অংশ নয়। তবে দলটি বলছে, তারা সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করবে না। ইতামারের দল এ যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোর বিরোধিতা করে আসছে। তারা এটিকে ‘কলঙ্কজনক’ যুদ্ধবিরতি চুক্তি বলে অভিহিত করেছে।
"