নিজস্ব প্রতিবেদক
মালয়েশিয়াকে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ইস্যুর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ইস্যুর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুহাদা ওথমান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। গত বছরের মে মাসে দেশটিতে প্রবেশের সময়সীমার সুযোগ হারানো ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হাইকমিশনারকে অনুরোধ জানান প্রধান উপদেষ্টা। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন জাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামারুল আহসান।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠকের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মালয়েশিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের নেওয়ার প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করবে- যাতে পরবর্তী গ্রুপগুলো কাজের জন্য সেদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে।’ গত ১ জানুয়ারি থেকে আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় মালয়েশিয়াকে অভিনন্দন জানান প্রধান উপদেষ্টা। আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে এবং পূর্ণ সদস্য হতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থন কামনা করেন তিনি। ড. ইউনূস হাইকমিশনারকে জানান, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন ৭৯/১৮২ অনুযায়ী ২০২৫ সালে জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ আসিয়ানের সমর্থন চায়।
বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে এবং মালয়েশিয়ার কারখানাগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তরে কাজ করতে মোহাম্মদ সুহাদা ওথমানের প্রতি আহ্বান জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কুয়ালালামপুরে চতুর্থ দ্বিপক্ষীয় পরামর্শ ব্যবস্থায় (বিসিএম) অংশগ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে একটি সুবিধাজনক তারিখের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের পঞ্চম যৌথ কমিশন বৈঠক আয়োজনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’ হাইকমিশনার বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ একই ধরনের বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’ এ সময় এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন জাবি ভিসি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামারুল আহসান গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় অধ্যাপক কামরুল আহসান ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের জীবনযাপন বিষয়ে কী কী অগ্রগতি ঘটেছে, সেসব বিবরণ প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। ভিসি কামরুল আহসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহুল প্রতীক্ষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। ঘোষণা অনুসারে, নির্বাচনের তফসিল আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে গত ১০ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন জাবি ভিসি।
অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ১৯৭১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র নয়বার জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রায় ৩৩ বছর ধরে প্ল্যাটফরমটি নিষ্ক্রিয় রয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া তিনি ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং প্রথম বর্ষের ভর্তি ফর্ম ফি কমানো হয়েছে বলেও অধ্যাপক কামরুল আহসান জানান। জাবি ভিসির সঙ্গে সাক্ষাতে গত জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন ড. ইউনূস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষাগত অগ্রগতিতেও সন্তোষ জানান। জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি চায়, তাহলে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আপনারা চান, তাহলে জাকসু নির্বাচন আয়োজন করুন। নির্বাচনটি আপনাদের নেতৃত্বে আয়োজন করুন।’ এ সময় অধ্যাপক কামরুল আহসান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলা সম্পর্কেও প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। তিনি বলেন, আহত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩৭ লাখ টাকা প্রদান করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রবসহ আরো অনেকে।
"