নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ নেই

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধ বলে মেনে নিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলও অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নিয়েছে, কাজেই এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ চ্যালেঞ্জ করে করা একটি রিট সরাসরি (সামারিলি রিজেক্ট) খারিজ করে এ আদেশ দেন আদালত। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মো. মাহমুদুর রাজী সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এ আদেশ দেন।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়া চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এস এম মনিরুল আলম। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আক্তার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহহাব ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দা সাজিয়া শারমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদুল হক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রুহুল আমীন শিকদার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাব্বির হোসাইন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধ বলে মেনে নিয়েছে, কাজেই এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক মহলও অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নিয়েছে, সুতরাং এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তবে এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী মহসীন রশিদ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠন ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়া হয়। সেদিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পক্ষে মতামত দিয়ে স্পেশাল রেফারেন্স দেন। সুপ্রিম কোর্টের মতামত ও বৈধতা পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারকে শপথ পাঠ করান।
স্পেশাল রেফারেন্সে আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতি বলেন, ‘দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি গত ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করা সম্ভবপর নয়।’
‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ হতে গত ৮ আগস্ট এক স্মারকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত যাচনা (চলমান) করা হয়েছে।’
‘এ বিষয়ে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শোনা হলো। এ অবস্থায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কোনো বিধান না থাকায় উল্লেখিত প্রশ্নের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ মতামত প্রদান করছে যে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি উক্তরূপে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করাতে পারবেন।’
"