নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির আলোচনা আগামী সপ্তাহে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করা হবে। সরকার আশা করছে, আলোচনা শুরু করে আগামী সপ্তাহেই তা শেষ হবে। এতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারি এ ঘোষণা প্রকাশের জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই সময়ে তা ঘোষণা নাও হতে পারে। কয়েকদিন বেশি লাগতে পারে। তবে সেটা খুব বেশি দেরিও হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
ঘোষণাপত্র নিয়ে কাদের সঙ্গে আলোচনা হবে, সে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, শুধু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বাইরেও সামাজিক সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। তবে সবার সঙ্গে বসে কথা বলা যাবে না। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলা হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা যেটা বলতে যাচ্ছি, ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। কেউ বাদ যাবে না। সবার কথাই শোনা হবে। প্রেক্ষাপটে ঐকমত্য আছে। ঐকমত্য আছে বলেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে আমরা কী করব... এটা আলোচনায় যাবে। যেমন সংবিধান সংস্কার নাকি বাতিল করার প্রশ্নটি। এটি আমরা আলোচনা করে ঠিক করব। যারা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল, তাদের সঙ্গে তো বসবই, সামাজিক, নারী, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠন বা যারা গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে, সবার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলব, বসব। আশা করি, এটি আগামী সপ্তাহে শুরু ও শেষ হবে। পরামর্শের জন্য আগামী সপ্তাহটি ধরা হয়েছে।’
ঘোষণাপত্রের প্রস্তাবনা এরই মধ্যে ছাত্ররা দিয়েছেন জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ঘোষণাপত্র কিন্তু সরকার দেবে না। সরকার ঘোষণাপত্রের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করছে। ঘোষণাপত্র আসবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সব রাজনৈতিক পক্ষ, দল, সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কর্মসূচি দিয়েছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই কর্মসূচির আগের দিন গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে রাষ্ট্রীয় এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের জন্য অন্তর্র্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, সরকার যে জায়গাটি চাচ্ছে, সবার সঙ্গে যেহেতু কথা বলতে হবে, হয়ত কিছু সময় বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু এটা দেরি হবে না, খুব বেশি দেরি হবে না। হয়ত তাদের সময়সীমার কয়েকদিনের মধ্যেই এটা হয়ে যাবে। যদি আলোচনার ভিত্তিতে ১৫ জানুয়ারি হয়, ১৫ জানুয়ারি হতে পারে। কিন্তু সরকার চাচ্ছে সবপক্ষের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে করা হোক। তারা (সরকার) মনে করেন, শিক্ষার্থীরা এ ধৈর্য ধারণ করবেন, সংযম দেখাবেন। এটা সবার মাধ্যমে যদি হয়, সর্বসম্মতিক্রমে হয়, তাহলে এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। সবার জন্য ভালো হবে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রবিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বলে সেই আলোকে সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরি করবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে এবং এটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটা নিয়ে সামনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কথাবার্তা হবে। সে আলোকেই খসড়া হবে। তারা আশা করছেন, এ নিয়ে সামনে আরো অগ্রগতি দেখা যাবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কবে আলোচনা হবে, সে বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক হয়নি বলে জানান প্রেস সচিব।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কর্মসূচি দিয়েছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হয়। তখন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই কর্মসূচির আগের দিন গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে রাষ্ট্রীয় এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেছিলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিত, ঐক্যের ভিত্তি ও জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’
এরপর ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের জন্য অন্তর্র্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ নিয়ে এ সময়সীমার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আজকের সংবাদ ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের ঘোষণায় কিন্তু বলেছিলাম, কিছুদিনের মধ্যে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’ তখন আরেকজন সাংবাদিক জানতে চান, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে কি না? জবাবে শফিকুল আলম আগের উত্তরের কথাই মনে করিয়ে দেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছয় সাংবাদিক হত্যার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, এটা সরকারের অগ্রাধিকার। অন্যদিকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নতুন করে তদন্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। গুম সংক্রান্ত কমিশন খুব ভালোভাবে কাজ করছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, দু-একটা আয়নাঘরে সাংবাদিকদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে টিআইবির সমালোচনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা সবার বক্তব্যকে স্বাগত জানাই।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধের প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বুলগেরিয়া ভিসা সেন্টার ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে হস্তান্তরের কথা আগেই জানিয়েছে। ১২২ জন বাংলাদেশি ছাত্রকে তারা ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে ভিসা দিয়েছে। রোমানিয়াও ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে তাদের দূতাবাসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কাজাখস্তান জানিয়েছে, তারা ব্যাংকক থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবে।
এ তিন দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের সঙ্গেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপিয়ান ডেস্ক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আজাদ মজুমদার বলেন, সামনে হয়ত এ বিষয়ে আরো কিছু অগ্রগতি হবে।
"