ধামইরহাট (নওগাঁ) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

ধামইরহাট ও শিবগঞ্জ সীমান্ত

বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা

নওগাঁর ধামইরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছে বিএসএফ। তবে বিজিবি বাধায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ চেষ্টা নস্যাৎ হয়েছে। এনিয়ে দুই সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বস্তাবর সীমান্তে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল বুধবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বাধায় কাজ বন্ধ করে বিএসএফ। বর্তমানে সেখানে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পত্নীতলা-১৪ বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সতর্ক অবস্থানে আছ দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বস্তাবর এলাকায় প্রায় ৬০০ গজের মধ্যে দুই দেশের কোনো বেড়া নেই। গতকাল সকালে হঠাৎই বিএসএফের একটি দল ওই সীমান্ত এলাকায় তারকাঁটা বেড়া নির্মাণের জন্য আসে। আইনানুযায়ী দুই দেশের সীমান্ত পিলার থেকে দেড়শ’ গজের মধ্যে ফসল চাষ ব্যতিত স্থায়ী কোনো স্থাপনা কিংবা বেড়া দিতে পারবে না। এটি দুই দেশের জন্যই প্রযোজ্য হবে। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে কাঁটাতার নির্মাণ করতে আসে। জানতে পেরে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় কাজ না করেই ফিরে যায় বিএসএফ সদস্যরা।

তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক মৌখিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক করা হবে। সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত কয়েদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসন করতে বিজিবির আহ্বানে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ও বিকেলে সেক্টর কর্মান্ডার পর্যায়ে পতাকা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ভারতীয় অংশে বিএসএফের সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ রেখেছেন। চৌকা সীমান্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি জায়গায় একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে বিএসএফ। সেই রাস্তাঘেঁষে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের চেষ্টা করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়ায় গত রবিবার সন্ধ্যায় ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সবদুলপুর এলাকায় স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। সেদিনই বিজিবির পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। রাত হয়ে যাওয়ায় সেদিন আর কোন কাজ করেননি তারা। সোমবার সকালে ফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করে বিএসএফ সদস্যরা। বিজিবির পক্ষের বাধা কর্ণপাত না করায় সেদিনই বিকেলে বিষয়টি মীমাংসায় পতাকা বৈঠক হয়। তবে কোনো সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার সকালে বিএসএফের পক্ষ থেকে আবার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি।

গত সোমবার বিজিবি-বিএসএফের শক্ত অবস্থান আর মঙ্গলবার দুই দেশের নাগরিকদের সীমান্তের কাছে এসে পাল্টাপাল্টি স্লোগানে সীমান্তজুড়ে আরো উত্তাপ ছড়ায়। ফলে গত দুদিন সীমান্তের কাছের আবাদি জমিতে কৃষকরা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। তবে গতকাল বুধবার সকালে চৌকা সীমান্ত এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, আগের পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় আতঙ্ক কাটিয়ে কৃষকদের মাঠে কাজ করছে। আবদুর রাজ্জাক নামের এক কৃষক বলেন, গত দুদিন মাঠে কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। তবে আজ (বুধবার) থেকে কাজ শুরু করেছি। অনেকেই আবাদি জমিতে সেচ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষি কাজ করছেন। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে আতঙ্ক কমেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলে আবাদি জমিগুলোয় চাষবাষে সমস্যা হবে। তখন বিএসএফের সদস্যরা আমাদের কাজ করতে দেবে না। এ সমস্যার কারণে আমরা প্রতিবাদ করতে সীমান্তের কাছে জড়ো হয়েছি। বুধবার দুুপুরের ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ে বৈঠকের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, দুই বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছে বিএসএফ। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সুরুজ সিংসহ অন্যরা। এর আগে বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। স্থানীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close