নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবেগঘন মিলন মা-ছেলের
লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া, দ্য ক্লিনিকে চিকিৎসা শুরু * বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী
উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ৭ বছর পর হিথ্রো বিমানবন্দরে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয় খালেদা জিয়ার। মাকে কাছে পেয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকতেও দেখা যায় ছেলে তারেক রহমানকে। উপস্থিত ছিলেন তারেকের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান। এ সময় বিমানবন্দরে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে লন্ডনের দ্য ক্লিনিকে নিয়ে যান ছেলে তারেক রহমান। সেখানে এখন চিকিৎসা নেবেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গতকাল বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খালেদা জিয়া ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলে সর্বশেষ তারেক রহমানের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তারেক ও তার পরিবার ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন।
নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান তারেক রহমান : লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যান ছেলে তারেক রহমান। লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় তারেক রহমান মাকে নিয়ে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের দ্য ক্লিনিকের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বেলা ১১টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছান তারা। এ সময় তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান তাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত মঙ্গলবার রাতে কাতার আমীরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের সময় বিকেল ৩টায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী উড়োজাহাজটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুক্তরাজে?্য বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হজরত আলী খান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। বিএনপি চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দরের বাইরে সমবেত হন দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী। সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা করেন বিএনপির নেত্রী।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন বলেন, খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসা চিকিৎসকরা যুক্তরাজ্যের দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসকদের কাছে খালেদা জিয়াকে কাগজপত্রসহ বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কাগজপত্র দেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করা হবে।
লন্ডনের এ ক্লিনিকে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসা জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় দুই মাসের মতো লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত : ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। তৎকালী সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে এসেছিলেন। এরপর তার আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। এ সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের সরাসরি দেখাও হয়নি।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের অন্য নেতারা বিদায়ি শুভেচ্ছা জানাতে তার বাসভবনে যান। মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টায় তিনি গুলশানের বাসভবন থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন এবং রাত ১০টা ৫১ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান খালেদা জিয়া। জটিল রোগীদের দীর্ঘ দূরত্বে স্থানান্তরের জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত করা হয় এয়ারবাস এ৩১৯ মডেলের এ উড়োজাহাজটিকে। এদিন রাত পৌনে ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। কাতারের দোহায় যাত্রাবিরতির পর বুধবার বাংলাদেশ সময় ২টা ৫৫ মিনিট লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেনের বরাতে শায়রুল আরো জানান, যাত্রাবিরতির সময় কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম উড়োজাহাজে এসে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে দুর্নীতির এক মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে পাঠানো হয় তিনবারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে। কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে সরকারের কাছে কয়েকবার দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। করোনার সময় নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি তৎকালীন সরকার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তার যে মামলায় সাজা হয়েছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
"