নিজস্ব প্রতিবেদক
চলচ্চিত্রে বেশিরভাগ অনুদানই কাজে আসেনি
সংস্কৃতি উপদেষ্টা
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, চলচ্চিত্রে অনুদান আমাদের কোনো কাজে আসেনি। আমাদের চলচ্চিত্র কাফেলায়ও সেগুলোর বেশিরভাগই খুব একটা ভূমিকা রাখেনি। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে কর্মশালাভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংস্কৃতির বিকাশ ও বিকেন্দ্রীকরণের জন্য দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে কর্মশালাভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘রিমেম্বারিং মনসুন রেভ্যুলুশন’ কর্মসূচির আওতায় আটটি বিভাগে আটটি মাঝারি দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র নির্মাণে কর্মশালা পরিচালনার জন্য আট চলচ্চিত্র পরিচালককে নির্বাচিত করা হয়েছে। তারা হলেন- অনম বিশ্বাস, হুমায়রা বিলকিস, নুহাশ হুমায়ুন, শঙ্খ দাশগুপ্ত, শাহীন দিল রিয়াজ, রবিউল আলম রবি, তাসমিয়াহ আফরিন মৌ এবং মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম।
উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘আমরা সজাগ আছি, আমাদের কাজের ধরন দেখলে বুঝতে পারবেন। আমরা যেসব নির্মাতাদের নির্বাচিত করেছি, তাদের প্রত্যেকেই পোর্টফোলিও সম্পর্কে জানেন। আমাদের প্রথম দেখার বিষয় ছিল, কী ধরনের ছবি বানাতে পারে। ৫০টা কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, একটি কাজ করেছে কি না, যেটা উল্লেখ করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘নবীন ও প্রশিক্ষিত চলচ্চিত্রকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের নির্বাচিত আটজন চলচ্চিত্রকার আটটি বিভাগীয় শহর থেকে এ বছর আটটি মাঝারি দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। এ উদ্দেশ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সার্চ কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির লক্ষ্য ছিল, আটজন চলচ্চিত্রকার নির্বাচন করা, যারা ২০২৫ সালে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে চলচ্চিত্রবিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করবেন এবং কর্মশালায় প্রশিক্ষিত জনবল নিয়ে আটটি চলচ্চিত্র তৈরি করবেন।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘এ আটজন চলচ্চিত্রকার নির্বাচনের জন্য আমাদের সার্চ কমিটি গত দুই মাসে তিনটি অফলাইন এবং একাধিক অনলাইন সভায় মিলিত হয়। কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে প্রশিক্ষক-চলচ্চিত্রকারদের নাম প্রস্তাব করেন। সেসব প্রস্তাবনা থেকে ১৬ জনের একটা লম্বা তালিকা বানানো হয়। তাদের সঙ্গে কমিটি প্রাথমিক আলাপ সম্পন্ন করেন। সেই যোগাযোগসাপেক্ষে আমাদের লম্বা তালিকায় থাকা চলচ্চিত্রকারদের প্রত্যাশা, আগ্রহ, জেন্ডার, কাজের ধরন এবং সার্বিক পোর্টফোলিও বিবেচনায় আটজনের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়।’ ফারুকীর মতে, ‘এ উদ্যোগের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দুটি লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছে। এক. শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা এ নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঢাকার ও ঢাকার বাইরের আগ্রহী তরুণ জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ তৈরি করা, কর্মদক্ষতা তৈরি ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া। দুই. প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে বিভিন্ন কাজে লাগানোর জন্য ওই প্রশিক্ষকদের সঙ্গেই চলচ্চিত্র নির্মাণে অংশগ্রহণ করা।’
তিনি জানান, এসব কর্মশালা এবং নির্মাণের জন্য কোনো ছক বেঁধে দেওয়া হয়নি। এতে করে শিল্পীরা তাদের নিজস্ব কর্মপদ্ধতি ও সৃজনশীলতার প্রয়োগ ঘটাতে পারবেন এবং শৈল্পিক, রাজনীতিমনস্ক, বৈপ্লবিক এবং তারুণ্যমণ্ডিত শিল্পভাষা তৈরিতে আরো স্বাচ্ছন্দ্য হবেন। বিশেষ করে যে দীর্ঘ দুঃসময় আর রক্তস্নাত জুলাই বিপ্লব; বাংলাদেশের মানুষ এখন স্বাধীনভাবে নিশ্বাস ফেলছে, তার একটি শৈল্পিক ভাষ্য এসব চলচ্চিত্রে দেখা যাবে বলে আমরা আশা করি। এ প্রতিভাবান ও বরেণ্য পরিচালকদের অংশগ্রহণে চলচ্চিত্রশিল্পকে ব্যাপকভাবে সাফল্যমণ্ডিত করবে। পরবর্তী সময়ে এসব কর্মশালা থেকে উঠে আসবে সফল চলচ্চিত্রনির্মাতা।’ সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘এ প্রজেক্টের মাধ্যমে আটটি বিভাগে ওয়ার্কশপ উন্মাদনা তৈরি হবে। এ ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে ভবিষ্যতে অনেক ভালো ভালো পরিচালক উঠে আসবেন। তারা এক দিন বাংলাদেশের সিনেমায় অবদান রাখবেন।’
"