নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫

বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা আজ

চিকিৎসা নেবেন লন্ডন ক্লিনিকে * পৌঁছেই সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি * এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছেন কাতার আমীর

উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে পরদিন লন্ডনে পৌঁছে এ হাসপাতালে ভর্তি হবেন তিনি। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব কথা জানান।

ডা. জাহিদ হোসেন জানান, আগামীকাল (আজ) রাত ১০টায় কাতার আমীরের স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ম্যাডাম ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-দোহা এবং দোহা-লন্ডনের হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা দেবেন। কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে রাজকীয় বহরের এ বিশেষ বিমান পাঠিয়েছেন। এ তথ্য জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, কাতার আমীরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ (গতকাল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ বিমানেই ম্যাডামের মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাত্রা শুরু হবে।

ডা. জাহিদ হোসেন জানান, আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিকসরা থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্য এই বিমানে ?যাবেন। তারা হলেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগছেন। গত রবিবার রাত সোয়া ৯টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসায় দেখা করেন।

এরপর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, তাদের নেত্রী সুস্থ হয়ে দ্রুত দেশে ফিরবেন, এটি তাদের কামনা। বিএনপির মহাসচিব এ-ও বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গণতন্ত্রের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন, এটি তারা আশা করেন। বিএনপি যেন গণতন্ত্রের পক্ষে, দেশের মানুষের পক্ষে থাকে, তাদের সেই নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সাক্ষাৎ শেষে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘চেয়ারপারসন আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। দেশ নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে সেসব মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চেয়ারপারসন। আমাদের সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন।’

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক একজন সম্পাদক বলেন, ‘চেয়ারপারসন মঙ্গলবার (আজ) রাতে ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা করবেন। বুধবার সকালে লন্ডনে এসে পৌঁছাবেন। বিমানবন্দরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রিসিভ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করবেন।’ খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। সেখানেই তার চিকিৎসা হবে। চিকিৎসকরা প্রয়োজন মনে করলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকেই তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ফেরার আগে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করবেন।’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলেন, ‘লিভার সিরোসিসসহ একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া লন্ডনে দুই মাস অবস্থান করতে পারেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন।’ খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন। বুধবার সকালে তিনি লন্ডনে পৌঁছাবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় তার ওঠার কথা।’

কাতার আমীরের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সে যাবেন খালেদা জিয়া : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সফরসঙ্গী ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘চেয়ারপারসনকে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে, তা কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ব্যক্তিগতভাবে সরবরাহ করছেন।’

সাত বছর পর মা ও ছেলের সাক্ষাৎ হবে : লন্ডনে তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে ৭ বছর পর দেখা হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার। এর আগে ২০১৭ সালে ১৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি। ওইসময় তার চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা হয়েছিল। চারটি মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি।

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন সেনাপ্রধান : গত বৃহস্পতিবার রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে তার গুলশানের বাসভবনে যান। তিনি প্রায় ৪০ মিনিট সেখানে ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর স্বাগতম জানান সেনাপ্রধানকে। সেনাপ্রধানের সঙ্গে তার সহধর্মিণীও ছিলেন। গত রবিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম। রাত সোয়া ৭টায় বাসভবনে যান এবং ৮টায় বাসভবন ত্যাগ করেন তিনি। তাদের মধ্যে ৩০ মিনিট আলোচনা হয়।

যারা যাবেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে : খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যাবেন। যারা যাবেন, তারা হলেন- তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলী রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আল মামুন, শরীফা করিম স্বর্ণা, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজ এবং গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম ও রূপা শিকদার। প্রতিনিধিদের তালিকা এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, লিভার, ফুসফুস, কিডনি, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। বিগত দিনে তাকে একাধিকবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকরা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার লিভারে এখন যন্ত্র বসানো রয়েছে। লিভারের রোগই তার স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণ।’ ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় পুরান ঢাকার বিশেষ আদালত। এরপর ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারির সময় সরকার তার সাজা স্থগিত রেখে তাকে গুলশানের বাসভবনে থাকার শর্তে মুক্তি দেয়। সাময়িক কারামুক্তির পর থেকেই খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার এবং দল থেকে একাধিকবার দাবি জানিয়েছিল। প্রতিবারই শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তির কথা বলে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। গত বছরের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের আদেশে তিনি সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close