নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

কুয়াশা-ঠাণ্ডা বাতাস

শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশায় জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। ঢাকার আকাশ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার পরিমাণও কমে যায়। এ দিন সকাল ৬টায় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত বুধবার ছিল ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে গেছে। বেলা ১১টার পর রোদ উঠতে শুরু করে। এ বছর ঢাকায় এমন কুয়াশা এটাই প্রথম। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে গোপলগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায়। এদিন সকাল ৯টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

আগামীকাল শনিবার থেকে গোপালগঞ্জের তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ধারণা করা হচ্ছে আগামী শনিবার থেকে গোপালগঞ্জের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত তিন দিন মধ্যরাত থেকে দিনের বেশিরভাগ সময় কুয়াশায় ঢেকে থাকছে গোটা জেলা। ভোর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে কুয়াশার ঘনত্ব। সেইসঙ্গে আছে হিম শীতল ঠান্ডা বাতাস। শিগগিরই এ জেলায় নামবে শৈত্যপ্রবাহ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। সকাল ৯টায় তাপমাত্রার পারদ নেমে দাঁড়ায় ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।

ইমাম গাজ্জালী/ওকে-ওবায়েদ

ঘন কুয়াশায় যান চলাচলে বিঘ্ন

দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র শীতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। আর একইসঙ্গে ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। যমুনা নদীতে মার্কিং পয়েন্ট দেখতে না পেয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চুয়াডাঙ্গা : জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ও সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরে এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আগের দিন বুধবার এখানে তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, এখন থেকে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা কমতে থাকবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, ৬ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ৭ ডিসেম্বর ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়, যা ছিল বিগত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর গত বছর শীতে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।

বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) : ঘন কুয়াশায় নৌপথের মার্কিং পয়েন্ট ঢেকে যাওয়ায় পাবনার কাজীরহাট ও মানিকগঞ্জের আরিচার মধ্যে গত বুধবার মধ্যরাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়। এতে ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। ভোগান্তিতে পড়েন চালকরা। বিআইডব্লিউটিসি কাজীরহাট কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক ফখরুজ্জামান বলেন, রাত সাড়ে ১১টা থেকে নদীতে কুয়াশার তীব্রতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে চ্যানেলের মার্কিং পয়েন্ট অস্পষ্ট হয়ে গেলে নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে বুধবার রাত ২টায় কাজীরহাট ঘাট থেকে কিষানি ও আরিচা থেকে ছেড়ে আসা অন্য আরেকটিসহ দুটি ফেরি মাঝ নদীতে নোঙর করে রাখা হয়। তিনি জানান, কুয়াশার তীব্রতা কমে গেলে বেলা সাড়ে ১১টায় ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনগুলো সিরিয়ালি পার হবে বলে জানান তিনি।

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) : ঠাকুরগাঁওয়ে পীরগঞ্জে কয়েকদিন ধরে মুখ দেখা যাচ্ছে না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, এ শীতে ২০০ কম্বল ও ৩ লাখ টাকা অনুদান পাওয়া গেছে, যা শিগগিরই বিতরণ করা হবে। আরো চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। হিমেল বাতাসে যমুনা চরের অসহায় মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জে তাপমাত্রা ছিল ১৩ সেন্টিমিটারের নিচে। সদর উপজেলার চররায়পুর গ্রামের কৃষক বারেক আলী বলেন, ঠাণ্ডা বাতাস ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে বেগুন ও কাঁচামরিচের ক্ষেতে পরিচর্যা করতে হচ্ছে। শীতে বোরো বীজতলা ও মরিচ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় যানবাহন চালাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়েছে।

শালিখা (মাগুরা) : মাগুরার শালিখায় তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ১২-১৬ ডিগ্রির মাঝে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু সময় সূর্যের দেখা মিললেও পরে আর দেখা মেলেনি। সন্ধ্যার পর থেকে হালকা কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, লোকালয়।

নীলফামারী : হিমালয় পাদদেশের জনপদ নীলফামারীতে শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সারা দিন মিলছে না সূর্য়ের দেখা। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক এ কে এম বাহাউদ্দি জাকিরিয়া জানান, ঘন কুয়াশায় বিমান অবতরণ ও উড্ডায়নে বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য বিমানে শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। একটি বিমান রানওয়ে অবতরণে পাইলটের দুষ্টির প্রয়োজন ২ হাজার ভিজিবিলিটি। ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা বিমান বন্দর রানওয়েতে বিমান অবতরণের সময় দৃষ্টি শাক্তির ভিজিবিলিটি পাচ্ছে শূন্যের কোটায়। ঘন কুয়াশায় বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : জেলার কমলগঞ্জে শীতের প্রকোপের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। বইছে হিমেল বাতাস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলার শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দুদিন মঙ্গল ও বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাতভর বৃষ্টির মতো পড়েছে কুয়াশা। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও কাহিল হয়ে পড়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close