প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত
ওপারে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ ঘনাচ্ছে সামরিক জান্তার পতন
মংডুসহ ১৩ শহর দখল সীমান্তজুড়ে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশের সীমানা বরাবর ওপারে মিয়ানমার অংশের সবটুকু এলাকাই এখন আরাকান আর্মির দখলে। ওই বিশাল এলাকা এখন মুক্তাঞ্চল। এক বর্গইঞ্চি জমিনও নেই সরকারি সেনাদের হাতে। তারা সেনাছাউনি ছেড়ে পালিয়েছেন। ওখানে কায়েম হয়েছে আরাকান আর্মির প্রশাসন ও রাজস্বনীতি। আরাকান আর্মির যোদ্ধার ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছেন রাজধানী নেপিদোর দিকে। দেশটির সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং যুদ্ধের ময়দানে ক্রমেই হয়ে পড়ছেন কোণঠাসা, হীনবল ও মিত্রহীন। মিয়ানমারের একাধিক সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে গণবিচ্ছিন্ন সামরিক জানতার পতন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ২৭০ কিলোমিটার সীমানা বরাবর মিয়ানমার অংশের পুরোটাই আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে লড়াইয়ের পর গত রবিবার সকালে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। সোমবার মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি দাবি করেছে, রবিবার সকালে জান্তার সীমান্ত এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপি ব্যাটালিয়ন নম্বর ৫ লক্ষ করে হামলা চালানো হয়। মংডু শহরের বাইরে তারা অবস্থান করছিল। জান্তা বাহিনীর পাশাপাশি তাদের মিত্র আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির রোহিঙ্গা মিলিশিয়া, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে আরাকান আর্মি। হামলায় সরকারি বাহিনী ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়েছে।
রাখাইন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, মংডুতে লড়াইয়ের পর সোমবার আরাকান আর্মি মিলিটারি অপারেশন কমান্ড ১৫-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে গ্রেপ্তার করে। এর বাইরে ৮০ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ও জান্তা সেনাকে গ্রেপ্তার করেছে আরাকান আর্মি। গত মে মাসের শেষ দিক থেকে মংডুতে হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি। মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ পেতে তাদের ৬ মাস সময় লেগেছে। আরাকান আর্মির দাবি, বাংলাদেশ সীমান্তের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু, রাখাইনের বুথিডং ও শিন এলাকার পালেতাওয়ার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। রাখাইনে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী একজন সামরিক বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য পুনঃস্থাপন করলে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে বসবাসকারী মানুষের দুর্দশা কমবে। গত মাসে জাতিসংঘ জানায়, রাখাইনে ২০ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। সামরিক জান্তার পক্ষ থেকে এসব রাজ্যে যাওয়ার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাসহ খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সেখানে যেতে পারছে না। সামরিক ওই বিশ্লেষক বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারকে বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর উঁচু পর্যায়ের সঙ্গে অর্থপূর্ণ সংলাপ করতে হবে।
আরাকান আর্মি এখন দক্ষিণ রাখাইনের গাওয়া, তাউনগুপ ও আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করছে। এরই মধ্যে আন শহরে ৩০টি সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে আরাকান আর্মি। অন্য শহরগুলোয়ও এগিয়েছে বিদ্রোহী এ গোষ্ঠী। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য আরাকান আর্মি। এরই মধ্যে এ গোষ্ঠী গত বছরের অক্টোবর থেকে হামলা চালিয়ে উত্তরের শান রাজ্যের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মি গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে হামলা চালিয়ে রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৩টির নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আরাকান আর্মি এখন দক্ষিণ রাখাইনের গয়া, তাউনগুপ এবং আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য লড়াই করছে বলেও জানিয়েছে ইরাবতী।
আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নাফ নদে আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কেউ যাতে নাফ নদ অতিক্রম করতে না পারে, সেজন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সামরিক জান্তার এজেন্ট বা চর থাকতে পারে। তারা যেন নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশে থেকে কোনোভাবে রাখাইনে প্রবেশ করে সামরিক জান্তার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করতে না পারে, সে দিকে কড়া নজর রয়েছে আরাকান বাহিনীর।
"