নিজস্ব প্রতিবেদক
উপদেষ্টাদের তৎপরতা
চোর প্রধানমন্ত্রী যার পুরো পরিবার চোর
আইন উপদেষ্টা
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দিকে ইঙ্গিত করে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘চোর প্রধানমন্ত্রী, যার পুরো পরিবার ছিল চোর। তিনি সারা দেশে বলে বেড়াতেন- এতিমের টাকা নাকি খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেছেন।’ আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে দুদকের আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আসিফ নজরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া ৩ কোটি টাকা এক জায়গায় রেখেছেন প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে। একটা টাকা সেখান থেকে আত্মসাৎ করেননি। ৩ কোটি টাকা ৬ কোটি টাকা হয়েছে। ওই টাকা কেউ স্পর্শ করেননি। সেজন্য তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে ১০ বছরের জেল দিয়েছে এদেশের দুদক-বিচার বিভাগ মিলে। আর সেই চোর প্রধানমন্ত্রী, যার পুরো পরিবার ছিল চোর; তিনি সারা দেশে বলে বেড়াতেন- এতিমের টাকা নাকি খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেছেন। এ চোরের মুখের সামনে কেউ কোনো কথা বলতে পারতেন না। দুদক তার দাসে পরিণত হয়েছিল, বিচার বিভাগ তার দাসে পরিণত হয়েছিল।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গে দেখা হলে বলত, ‘আপা তো আসলে কিছু করতে পারে না, উনার ছোট বোনের জন্য’। বোনের প্রতি কী মায়া! বোনকে রেখে উনি কিছু করতে পারেন না। বোন করেন, আসলে উনি করেন না...।’ ‘আমরা বিভিন্ন জায়গার আড্ডায় শুনতাম, শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কে? রেহানার কে? সালমান কার ক্যাশিয়ার? জয়ের টাকা কার মাধ্যমে যায়? পলক কার টাকা রাখেন? একজনও আছেন? দুদক তো ছিল, উচ্চ আদালত ছিল, কোনো বিচার হয়েছে? কিচ্ছু হয়নি বিচার।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দুদককে আরো ক্ষমতায়িত করার, স্বাধীন করার আলোচনা চললেও শেষ পর্যন্ত আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে ১০০ টাকার বালিশ নাকি ৪ হাজার, ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা দেখলাম, ৬টি ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বড় লোক হয়ে গেছে। ক্যাসিনো ব্যবসা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত একজন হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। আমরা দেখলাম, একটা বেহায়া প্রধানমন্ত্রী; তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এটা হাসতে হাসতে তিনি জাতির সামনে বলছেন।’
দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এরকম পরিস্থিতিতে আপনারা কাজ করতে পারেননি। অনেক এক্সকিউজ দিতে পারেন। তার মধ্যেও কেউ কেউ কাজ করার চেষ্টা করেছেন। এখন সেই পরিবেশ নেই। এখন কোনো উপদেষ্টা থেকে কেউ ফোন করেছে কোনোদিন? ‘কেউ আপনাদের কোনোরকম হস্তক্ষেপ করছে না। আপনারা প্রমাণ করেন, ভালো পরিবেশ পেলে আপনারা ভালো কাজ করতে পারেন।’ মাস ছয়েক আগে ফ্ল্যাটের নামজারি করাতে গেলে ভূমি কর্মকর্তারা ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অনুষ্ঠানে জানান আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ‘ছয়-সাত মাস আগে নামজারি করতে গিয়েছি। আমার মায়ের গহনা বেচা টাকা দিয়ে আমার বাবা ছোট্ট একটা জমি কিনেছিলেন; সেটা অন্যরা দখল করে ফেলেছে। সেটি কম দামে বিক্রি করে একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সেই ফ্ল্যাটের নামজারি করতে গিয়েছি। ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছে আমার কাছে। জাস্ট নামজারি করতে গেছি। কারণ ওই নামে নাকি আরেকজন নামজারি করে ফেলেছে ওই একই জমি। আমার বাবার কেনা ফ্ল্যাট, যে ফ্ল্যাট থেকে ২০ বছর ধরে ভাড়া পাই, সেটা নাকি অন্যজনের নামে নামজারি হয়ে গেছে। আর এখন ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ ঘুষ নেওয়ার নির্দেশ কি শেখ হাসিনা দিয়ে গিয়েছিলেন? ভূমি অফিসে যে লোকজন আছেনন যারা নামজারি করে, তাদের কি শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যতগুলো কাজ আছে, সবার থেকে ১০ লাখ করে টাকা নিতে হবে?’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের অবশ্যই আমরা দোষ দেব, সবাইকে দোষ দেব। কিন্তু এ দোষ দিয়ে নিজের অন্যায় থেকে নিজেকে যেন পার পাওয়ার চেষ্টা না করি। নিজেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমরা কী সৎ আছি?’ সবসময় কি বলপ্রয়োগের কারণে আমরা অসৎ হই? সবসময় কি আদেশ-নির্দেশের কারণে আমরা সৎ লোকের বিরুদ্ধে লাগি, অসৎ লোককে ছাড় দিই? প্রশ্নটা নিজেকে করি।’ আওয়ামী লীগ আমলের শতাধিক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সেই অনুসন্ধানের বর্তমান অবস্থা কী, তা তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব কাজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাহায্যে করা সম্ভব, সেগুলো আমরা করে ফেলব। আমরা দেরি করব না, আমাদের খুব বেশি সময় নেই।’ তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন কোনো প্রতিবেদন দেয়নি। আমি তাদের বললাম, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য আমরা একটা আইন করব; আপনারা কী আইন করে দিতে পারবেন কি না। পরে ওই কমিশন রিপোর্ট ছাড়াই আমাদের আইনটা (আইনের খসড়া) করে দিল।’
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন ও প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে দুটি আলাদা আইনের খসড়া পাওয়া গেছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ দুটি আইন অবলম্বনে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ-সংক্রান্ত আইনটি যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা হবে।’ দুদক কমিশন নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুদকের ব্যাপারটা আমি দেখছি না। যারা দেখছেন বা যিনি দেখছেন, তারা এ বিষয়ে সচেতন আছেন। দুদককে অচল রাখা যাবে না। এত বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে- দুদককে অবশ্যই সচল করতে হবে।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।
"