প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
মস্কোয় বাশার, ইরানি দূতাবাসে হামলা
সিরিয়ায় সশস্ত্রগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দেশটি রাজধানী দামেস্ক দখলে নেওয়ার আগেই ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সর্বশেষ অবস্থান জানা গেছে। গত রবিবার দিনভর বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর গুঞ্জন ওঠে। তবে বর্তমানে তিনি পরিবারসহ রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অবস্থান করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।
এদিকে বাশারের পতনের পর সিরিয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ দুই সমর্থক রাশিয়া সামরিক ঘাঁটি ও ইরানের দূতাবাস। সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ জানায় রাশিয়া। বাংলাদেশ সময় রবিবার রাত ১২টায় রুশ বার্তা সংস্থাগুলোর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাশার মস্কোয় পৌঁছেছেন। সেখানে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ক্রেমলিনের একটি সূত্রের বরাতে রুশ সংবাদ সংস্থা ও দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাশার আল আসাদ ও তার পরিবারকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে মস্কো।
এর আগে সরকার পতনের পর বাশারের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা শুরু হয়। বিদ্রোহী যোদ্ধারা রবিবার রাজধানীতে প্রবেশের সময় দামেস্ক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় একটি উড়োজাহাজ। ‘সিরিয়ান এয়ার-৯২১৮ ফ্লাইটটি’ দামেস্ক থেকে উড়াল দেওয়া সর্বশেষ ফ্লাইট ছিল বলে জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ চলাচলের ওপর নজর রাখা ফ্লাইটরাডার ২৪। এদিকে বাশার আল আসাদের পতনের পর হামলার কবলে পড়েছে দেশটির রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস। ইরানের সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। আরবি সংবাদ সংস্থা আল আরাবিয়ার প্রকাশিত ভিডিওতে, দূতাবাস ভবনের বাইরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে। ভবনের জানালা ভাঙা এবং ঘরের ভেতরে কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকার দৃশ্যও দেখা গেছে।
এছাড়া সিরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগাররা। তুমুল গৃহযুদ্ধের জেরে ২০১৫ সালে পতনের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। সে সময় তাকে রক্ষা করার জন্য হাজারো সেনা পাঠিয়েছিল রাশিয়া। তবে বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রার মুখে বাশার পতনের আগের দিন শনিবার কাতারের দোহায় এক প্রশ্নের জবাবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, কী ঘটবে সে ব্যাপারে তিনি ধারণার ভিত্তিতে কিছু বলতে চান না। তবে সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে মস্কোর পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তা তারা করছে।
অন্যদিকে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ঘোষণায় জানান, তার সেনাবাহিনী গোলান মালভূমির অসামরিক বাফার জোন সাময়িকভাবে দখলে নিয়েছে। ১৯৭৪ সালে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের হাতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার কারণে তা ‘ভেঙে পড়েছে’ বলে জানান তিনি। এদিকে সিরিয়ায় বাশার পতনের দিনেই সেখানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ৭৫টির বেশি কৌশলগত স্থাপনা লক্ষ করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে মার্কিন বিমানবাহিনীর একাধিক ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে জানায়, আইএসকে ছত্রভঙ্গ, দুর্বল ও পরাজিত করতে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে আইএস যাতে সুযোগ না নিতে পারে, সেজন্যও এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বি-৫২, এফ-১৫ এবং এ-১০ এসসহ মার্কিন বিমানবাহিনীর একাধিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে ৭৫টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। ওই অঞ্চলের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে সেন্টকম এ পটপরিবর্তনের সময়েও আইএসের আভিযানিক সক্ষমতা কমানোর জন্য অভিযান চালিয়ে যাবে।’
অভিযানের পর জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা বলেন, তারা কখনোই আইএসকে পুনর্গঠিত হতে দেবেন না এবং সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিতে দেবেন না। বাশার আল আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে জনতা। দামেস্ক থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানান, আসাদের পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দামেস্কের রাজপথে নেমে উল্লাসে মেতে ওঠেন সিরিয়াবাসী। এর মধ্যেই দলে দলে মানুষ আসাদের প্রাসাদে ঢুকে প্রায় সবই লুট করে নিয়ে গেছে। তছনছ করে দিয়েছে গোটা ভবন। লুটপাট চালানো এসব মানুষের বেশিরভাগই এসেছে গ্রামাঞ্চল থেকে।
বাশারের পতনে বিভিন্ন দেশেও সিরীয়রা উল্লাসে ফেটে পড়েন। বার্লিনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করেন। ২০১৫ সাল থেকেই বার্লিনে আশ্রয় নিয়ে আছে বহু সিরীয়। আর জার্মান সরকারের হিসাবমতে দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ সিরীয় আছে। তুরস্কের ইস্তম্বুলেও সিরীয়রা ‘সিরিয়ার বিপ্লবের সঙ্গে একাত্মতা’ প্রকাশ করে রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে, লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও। তবে গ্রিসে সিরীয় বিদ্রোহীদের সমর্থকরা রবিবার উল্লাস করে রাজধানী এথেন্সের সিরীয় দূতাবাসে ঢুকে ছাদে বিদ্রোহীদের পতাকা ওড়ান। এ সময় পুলিশ তাদের কয়েকজনকে আটক করলেও পতাকা নামায়নি।
"