ভোলা প্রতিনিধি
ভোলামুক্ত দিবস আজ
আজ ১০ ডিসেম্বর ভোলামুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে ভোলা থেকে লঞ্চযোগে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বর্বর হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় দ্বীপজেলা ভোলা। ওইদিন সকাল থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার খবরে হাজার হাজার জনতা রাজপথে নেমে এসে বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠেন। হানাদাররা ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় ক্যাম্প বসায়। এখানেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। পাশেই গণকবরে তাদের মাটিচাপা দিয়ে রাখা হতো, যা ওয়াবদা বধ্যভূমি নামে পরিচিত। এছাড়া সদরের খেয়াঘাট এলাকায়ও মানুষ হত্যা করে তেঁতুলিয়া নদীতে ভাসিয়ে দিত তারা।
ভোলা পতন হওয়ার আগো থেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা সরকারি স্কুল মাঠ, টাউন স্কুল মাঠ, আলিয়া মাদরাসার সামনের এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ নিত। টনির হাট, দেউলা তালুকদার বাড়ি, বোরহানউদ্দিন বাজার, গুপ্তগঞ্জ বাজার ও গরুর চৌক্কা এলাকায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে গরুর চৌক্কা এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রায় ৩ ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে পাক হানাদার বাহিনীর ১২ সদস্য আত্মসমর্পণ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন ভোলা ছিল ৯ নম্বর সেক্টরের মেজর জলিলের আন্ডারে। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করে। একসময় তারা দৌলতখান ও চরফ্যাশন থানা আক্রমণ করে অস্ত্র সংগ্রহ করে। এ অস্ত্র দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেয়। ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের খবর আসতে শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর ভোলা হানাদারমুক্ত হয়। সেদিনের স্মৃতি কখোনো ভুলবার নয়।
১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পরলে শহরের ভোলার খালে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের লঞ্চের গতিরোধ করার চেষ্টা করে মুক্তিকামী জনতা। এ সময় তারা গুলিবর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায়। পরে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় কার্গো লঞ্চটি ডুবে গেলে পাকিস্তানি হানাদারদের সব সদস্য নিহত হয়। এদিকে যথাযথ মর্যাদায় ১০ ডিসেম্বর ভোলামুক্ত দিবস উদযাপনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান।
"