কূটনৈতিক প্রতিবেদক
সংস্কার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন ইইউ কূটনীতিকদের
* প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইইউ ১৯ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক * ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের অনুরোধ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকরা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নসহ নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য ইইউ রাষ্ট্রগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ইইউ প্রতিনিধিরা। পরামর্শ ও সুপারিশ জানিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন তারা।
ইইউর ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ১৫ প্রতিনিধি তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, ‘ডিসেম্বরেজুড়ে আমরা বিজয় উদযাপন করি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সঙ্গে এমন একটি ইনট্যারেক্টিভ আলোচনায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।’ বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি। এ সময় তিনি ১৬ বছর ধরে অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং ব্যাংকিং সিস্টেমকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছিল- কূটনীতিকদের সেসব কথা জানান।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আকারে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এ মিস ইনফরমেশন
ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা যে ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে, তা দিয়েই তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রীতি জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথাও বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।
বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, এরই মধ্যে বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান। বৈঠকে ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রো, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারস্টেনস।
দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধানদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভান্ডারহাসেল্ট, বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই ইয়ানকোভ, এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রদূত মারিয়ে লুপ, লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত পেজি ফ্রান্টজেন, স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রদূত রবার্ট ম্যাক্সিয়ান, সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত ইভাগোরাস ভ্রায়োনাইডস। ছিলেন নয়াদিল্লিতে হাঙ্গেরি দূতাবাসের বাংলাদেশ অফিসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, পোল্যান্ডের দূতাবাসের কনস্যুলার, পর্তুগাল দূতাবাসের হেড অব মিশন, স্লোভেনিয়া দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং নয়াদিল্লিতে রোমানিয়া দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারিও।
"