নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতীয় দূতাবাসে স্মারকলিপি পেশ
ঢাকা-আখাউড়া লংমার্চ আগামী বুধবার
বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী চায় বিএনপির ৩ অঙ্গ সংগঠন
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাসে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন। স্মারকলিপিতে বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী চান বলে জানান বিএনপির তিন সংগঠনের নেতারা। গতকাল রবিবার দুপুর সোয়া ১টায় ভারতীয় দূতাবাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৬ প্রতিনিধি ওই স্মারকলিপি জমা দেন। এর আগে সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ কর্মসূচি থেকে আগামী বুধবার ঢাকা টু আখাউড়া লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দূতাবাসে যাওয়া ৬ প্রতিনিধি হলেন- যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির।
বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী চায় বিএনপির ৩ সংগঠন : ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ছয় প্রতিনিধি। এ তিন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, ‘আমরা বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী চাই। কোনো আগ্রাসীমূলক মনোভাবের প্রতিবেশীর দরকার নেই।’ তারা জানান, ত্রিপুরায় বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর, পতাকা অবমাননা, সম্পদ বিনষ্ট করা- এসব অবমাননার বিচার দাবি করা হয়েছে স্মারকলিপিতে। একইসঙ্গে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ‘একপেশে উসকানিমূলক বক্তব্য’ ও ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ বিনষ্টের মতো সংবাদ যাতে পরিবেশন না করা হয়, সে বিষয়টিও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতকে অস্বীকার করা যাবে না উল্লেখ করে ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’ থেকে যাতে ভারত বিরত থাকে সে বিষয়টি বলা হয়েছে বলে জানান সংগঠনগুলোর নেতারা। এর আগে ছাত্রদল-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের পদযাত্রা রামপুরায় পৌঁছালে সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় হ্যান্ডমাইকে গুলশান জোনের ডিসি তারেক আহমেদকে বলতে দেখা যায়, আমরা যে কোন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানাই। তিনি তিন সংগঠনের ছয়জন প্রতিনিধিকে স্মারকলিপি নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান। তারেক আহমেদ বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যতটুকু করা দরকার ঠিক ততটুকুই পুলিশ করছে। বিশৃঙ্খলা না হলে আমরা কিছুই বলব না, যেকোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে স্বাগত জানাই।
রামপুরায় পুলিশের বাধা : ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পদযাত্রা রামপুরা ব্রিজের কাছে আটকে দেয় পুলিশ। এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। বাড্ডা অভিমুখী রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ায় দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে পদযাত্রা থেমে যায়। রামপুরা ব্রিজের কাছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দেন। পদযাত্রায় সংগঠনগুলোর কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসেন। তারা ভারতকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পদযাত্রায় অংশ নিতে দলের প্রধান কার্যালয়ের কাছে তারা অবস্থান নেন। পরে ১১টা ৩৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিক পদযাত্রা শুরু হয়।
ভারতের শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশবিরোধী : পদযাত্রা শুরুর আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারতের শাসকগোষ্ঠী ‘বিদ্বেষপরায়ণ’ ও ‘বাংলাদেশবিরোধী’। গতকাল সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, কলকাতায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা, সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্রসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে এ পদযাত্রা হয়। পদযাত্রাটি রামপুরা ব্রিজের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিলে সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদল হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন।
পদযাত্রা শুরুর আগে রিজভী বলেন, ‘ওরা বিদ্বেষপরায়ণ, বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করে না, ওরা বাংলাদেশবিরোধী। ভুটান তাদের (ভারত) সঙ্গে নেই, নেপাল নেই, পাকিস্তান তাদের সঙ্গে নেই, শ্রীলঙ্কা নেই, ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপও তাদের সঙ্গে নেই। কেউ ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে না। কারণ ওরা মুখে যাই বলুক, ধর্মনিরপেক্ষ বলুক আর সেক্যুলার বলুক, ওদের মনের ভেতরে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ছাড়া কিছু নেই।’ রিজভী আরো বলেন, ‘আমি ভারতের শাসকগোষ্ঠীকে বলি, আপনারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলছেন- আমি তো দেখলাম এখানে ইসকন সমর্থকদের দ্বারা একজন আইনজীবী মারা গেলেন, তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। আপনাদের ওখানে যে শুভেন্দুসহ যারা আছেন, তারা তো এ ব্যাপারে একটা কথাও বললেন না, আওয়াজ পর্যন্ত তুললেন না। মারা গেল তো বাংলাদেশের মানুষ, তিনি মুসলিম, একজন আইনজীবী, তাকে মেরে ফেলা হলো। কোনো কথা নেই। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতা পর্যন্ত মিথ্যা কথা ছড়িয়ে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে লাভ হবে না।’
বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে ভারত আখেরে বাংলাদেশের উপকার করছে মন্তব্যও করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সেখানে গেলে ডলার খরচ হতো, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচারও হতো। আমাদের ডলার এখন সেখানে যাবে না। ভারত থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ হলে বাংলাদেশের মানুষ আরো শ্রম দিয়ে সেসব পণ্য উৎপাদন করবে।’ বাংলাদেশবিরোধী হয়ে ভারত কেন বাংলাদেশের ইলিশের জন্য কাতর হয়ে থাকে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী। বলেন, ‘এ পদযাত্রা একটি অন্যায় প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী শক্তির। যারা এ পদযাত্রায় শামিল হয়েছেন তাদের বুকের মধ্যে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন জ্বলছে। তিনি বলেন, এ প্রতিবাদ হবে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল। কারণ প্রতিবেশী দেশ প্রতি মুহূর্তে নাশকতার চেষ্টা চালাবে। তাদের ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে গেছে যে তারা চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ বলে দাবি করবে বলেছে। আমরা আমাদের মিলিত শক্তি, তারুণ্যের শক্তি নিয়ে এটাই বলব, তোমরা চট্টগ্রাম দাবি করবে কী কারণে? এসব ফাঁপা, ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে কিছু হবে না। তোমরা যদি এটা দাবি করতে পার, তাহলে আমরাও দাবি করব সিরাজ-উদ্দৌলার বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা ফেরত দাও আমাদের।’
রিজভী বলেন, ‘নানা অপ্রচার-অপতথ্য দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কী লাভ তাতে? কলকাতার নিউমার্কেট বন্ধ, ডিপার্টমেন্ট স্টোর বন্ধ, কলকাতার হাসপাতালে রোগী নেই, ক্লিনিকগুলো বন্ধ- এতে আপনাদের আনন্দ হতে পারে। আমাদের এখানে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।’ রিজভী বলেন, ‘আমরা একেবারে অবলম্বনহীন নই। আমরা বাংলাদেশের মানুষ আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানি। আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য আকাশ, পাতাল, ভূমি, পানি প্রতিটি জায়গায় আমাদের শক্তি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিও কম নয়- ১৮ কোটি মানুষের শক্তি। আমরা প্রত্যেক দিক থেকে দিল্লির আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছি।’
ঢাকা-আখাউড়া লংমার্চ বুধবার : ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে প্রতিবাদ পদযাত্রা ও স্মারকলিপি দেওয়ার পর ঢাকা টু আখাউড়া লংমার্চ কর্মসূচি করতে যাচ্ছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। আগামী বুধবার তারা ঢাকা থেকে লংমার্চ শুরু করবে। আগরতলার এ পারে বাংলাদেশ সীমান্তের আখাউড়া পর্যন্ত লংমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির তিন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তবে কোন তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। জানা গেছে, গত শনিবার রাতে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের শীর্ষনেতারা। ওই বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
"