গাজী শাহনেওয়াজ
পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ৪০০ গাড়ি
জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শিরদাঁড়া মজবুত করে এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ। নানা অজুহাতে কাজকর্মে শিথিলতা দেখিয়ে চলেছে তারা। এখন পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, বলা হচ্ছে ঘটনা ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। বিপরীতে পুলিশ দাবি করেছে, তাদের অভিযান পরিচালনা ও অপরাধী ধরার কাজে এখন বড় বাধা হয়েছে দুর্বল লজিস্টিক সাপোর্ট। যানবাহনের অভাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের এ দাবির সুরাহা করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় পুলিশের গাড়ি কেনার জন্য ১৯৭ কোটি টাকা ছাড় করেছে। এ টাকা দিয়ে পুলিশের জন্য ৪০০ গাড়ি কেনা হবে। অবশেষে পুলিশের দাবি পূরণ করল সরকার। পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্রমতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৯৫২। এর বাইরে পিকআপভ্যান ২৬০, জিপ ৯২, পেট্রোল জিপ ২১, মাইক্রোবাস ২৬, বাস ১৬, রায়টকার ৮, অ্যাম্বুলেন্স ৫ এবং প্রিজনভ্যান ১৫টি। যানবাহনগুলোর ৬০ শতাংশই ব্যবহার অনুপযোগী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথ্যমতে, পুলিশের গাড়ির জন্য ৮৭ কোটি টাকার চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। সার্বিক বিবেচনায় অর্থ বাড়িয়ে বরাদ্দ হয়েছে ১৯৭ কোটি টাকা। পুলিশ হেডকোয়ার্টার বলছে, গাড়ির জন্য বরাদ্দ করা অর্থ আমরা পেয়েছি। দরপত্র কার্যক্রম চলমান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটা আন্দোলন এবং জনতার অভ্যুত্থানে অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্য ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করে, আহত করে। ওইসময় প্রথম শহীদ হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। এ ঘটনায় ছাত্র আন্দোলনে নতুন মোড় নেয়। তখন পুলিশের গুলি ছোড়ার পাল্টা জবাবে জনতা থানা ঘেরাও এবং পুলিশের ব্যবহৃত যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে উত্তাল জনতা- দাবি পুলিশের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চার মাস পার হয়েছে। এখনো পুলিশ নানা কারণে রয়েছে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, একটা জায়গায় পুলিশের উন্নতি হয়েছে, এখন ঘটনা ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছাচ্ছে। তবে পুলিশের দাবি, তাদের অভিযান ও চলাচলের জন্য গাড়ির ঘাটতি রয়েছে। পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্টের পাশাপাশি তাদের সংস্কার কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের জন্য ৪০০ গাড়ি কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৭০০ সিসি ৫টি, ১৫টি ১৫০০ সিসির গাড়ি, ২০টি জিপ, ১০০টি সিঙ্গেল কেবিনভ্যান ও ২০০টি ডাবল কেবিনভ্যান গাড়ি রয়েছে। বাকিগুলো পুলিশের প্রয়োজন অনুযায়ী। এর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ১৯৭ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। মূলত পুড়ে নষ্ট হওয়া গাড়ি বিপরীতে এগুলো কেনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশের ৪০০ গাড়ি কেনায় পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টারকে। জানা গেছে, ডিএমপির ৫০ থানার জন্য মাহিন্দ্রা বোলেরোর গাড়ি ও ইসুজু, ডি-ম্যাক্স গাড়ি কেনা হয়। প্রতিবেশী ভারত থেকে কেনা এ গাড়ির মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেশটি এরই মধ্যে হস্তান্তর করেছে ১০টি মাহিন্দ্রা বোলেরোর গাড়ি। এ নিয়ে সমালোচনার রয়েছে। এর আগে পুলিশের কাজে জাপানি গাড়ি ব্যবহার করা হতো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ভারতের সঙ্গে গাড়ি ক্রয় চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে। তারা চীন কিংবা জাপান দেশ থেকে উন্নতমানের গাড়ি আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন। ভারতীয় গাড়ি কেনার প্রসঙ্গ টেনে এইচ এম দেলোয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, অনতিবিলম্বে ভারতীয় গাড়ি বাদ দিয়ে জাপানি গাড়ি ক্রয় করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও চায়, জাপানসহ উন্নত দেশ থেকে ভালোমানের গাড়ি ক্রয় করতে। এদিকে বর্তমানে পুলিশ অনেক পুরোনো গাড়ি ব্যবহার করছে। এটা ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট অফিসের কিছুটা লাভ হয়। একটা পুরোনো গাড়ির মেরামতের পেছনে প্রতি বছর সারপ্লাস ৩ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। সার্ভিসিংয়ের পর ১০০ গাড়িতে ২০ হাজার টাকা সাশ্রয় হলে ২০ লাখ টাকা সংশ্লিষ্টদের পকেটে ঢোকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলার দ্রুত উন্নতির জন্য পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে গাড়ির দরকার বেশি। এটা ছাড়া এ পুলিশ বাহিনীর স্বাভাবিক চলাচল ও অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
সূত্র আরো জানায়, গত তিন বছর ধরে পুলিশের নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ রয়েছে। যা আছে, তার অধিকাংশই পুরোনো মডেলের, লক্কড়-ঝক্কড়। অনেক গাড়ি আবার ফিটনেসবিহীন। নষ্ট হলে মেরামত করা হচ্ছে না। গাড়ি সংকটে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমও বিঘ্ন ঘটছে। রাজধানীসহ সারা দেশের সব থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ এখন রিকুইজিশন করা গাড়িনির্ভর। এজন্য থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করতে হচ্ছে। অনেক থানার পুলিশ আবার ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করছে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েই ডিউটি পালন ও অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। তাই নতুন গাড়ি কেনার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৪০০ নতুন গাড়ি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্সের এআইজি এনামুল হক সাগর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গাড়ি কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। টেন্ডার আহ্বান করা হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
"