কূটনৈতিক প্রতিবেদক
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে ভিসা-কনস্যুলার সেবা বন্ধ
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনার জেরে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। ইসকন নেতা চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে আগরতলায় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে গত সোমবার বাংলাদেশ উপদূতাবাসে হামলা চালায় ভারতীয় উগ্র সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি। তারা কনস্যুলার ভবনে ভাঙচুর ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দেয়। এ ঘটনায় কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার বিকেল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উপদূতাবাসে হামলার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তলবে হাজির হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বহুমুখী। এ সম্পর্ককে একটি মাত্র বিষয়ে সীমাবদ্ধ করা যাবে না।
এদিকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে আগরতলার উপদূতাবাসে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সহকারী হাইকমিশনের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মো. আল আমীনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, অবস্থার প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন আগরতলায় সব ধরনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আগরতলায় সোমবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে (উপদূতাবাস) হামলা চালায় আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সহযোগী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির শত শত কর্মী। এ সময় তারা উপদূতাবাসে ভাঙচুর ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দেয়। বাংলাদেশে ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে আগরতলায় উপদূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সহযোগী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি। সমাবেশ শেষে তারা দূতাবাসের ভেতরে হামলা চালায়।
আগরতলায় হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এ হামলার বাংলাদেশ সরকারকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রমাণিত এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা। এটি কূটনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দিল্লির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, কোনো অবস্থায়তেই কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
হামলা ঘটনায় সহকারী হাইকমিশনের দায়িত্বে থাকা ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ জনকে। এদিকে হামলার প্রতিবাদে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তলব পেয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হন হাইকমিশনার। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব এম রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রণয় ভার্মা। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বিস্তারিত কিছু জানাননি।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বহুমুখী। এ সম্পর্ককে একটি মাত্র বিষয়ে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। ভারতের হাইকমিশনার আরো বলেন, সত্যিকার অর্থে একটি গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চাই আমরা। দুই দেশ অনেক বিষয়ে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। পরস্পরের এ নির্ভরশীলতাকে উভয়ের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাই আমরা।
এদিকে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। কিন্তু তারা যদি আমাদের পায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায়, তাহলে বাংলাদেশি কেউ আর ভারতমুখী হবে না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর আধুনিক নদী বন্দর নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে লঞ্চঘাটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভারত আমাদের সঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এর ফলে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিল না। আমাদের দেশে অন্য ধর্মাবলম্বী যারা আছেন, তারা আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তার বিষয় আমরা দেখব এবং সরকারের কাজই হলো এটি। অনেকেই তাদের মিডিয়ায় এসে হুমকি দিচ্ছেন। দয়া করে এটি আর করবেন না।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুর রকিব, নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান, প্রেস ক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্তহ বিআইডব্লিউটিএর স্থানীয় কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার : ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দূতাবাস এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ভারতীয় দূতাবাসে প্রবেশের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে রাজধানীর শাহজাদপুর বাঁশতলায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা গেছে। বাঁশতলা থেকে ভারতীয় দূতাবাসগামী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগ। দূতাবাসের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠনের সমর্থকরা এ হামলা চালান। এর প্রতিবাদে এ ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বাঁশতলা থেকে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখী রাস্তায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিচয় দিয়ে চলাচল করতে পারছেন।
গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) তারেক মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আগরতলায় যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি নামে একটি সংগঠন ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। দূতাবাস এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দূতাবাস এলাকায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
"