বদরুল আলম মজুমদার
দেশে ফেরার বড় বাধা দূর হয়েছে তারেক রহমানের
বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে খালাস পাওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বড় বাধা দূর হয়েছে। কিন্তু তার নামে আরো কয়েকটি মামলা রয়েছে। সেসব মামলা থেকে মুক্তির পর দ্রুত দেশে ফিরে আসতে পারবেন তিনি। তবে যাবজ্জীবন সাজার মামলা থেকে খালাস পাওয়ায় বাকি মামলাগুলো শেষ হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার- বলছেন তার আইনজীবীরা। তারা জানান, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারিক পাইপলাইনে আছে। গতকাল রবিবারের রায়ের পর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও স্বস্তি প্রকাশ করেন। এখন তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বড় বাধা দূর হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। ঠিক কখন তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান- এটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে বলে জানান বিএনপি নেতারা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে খালাস পাওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই এবং শিগগিরই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিজয়ের প্রথম দিনে আপনাদের একটি সুখবর দিতে চাই। সেই মামলার রায় আজ (রবিবার) প্রকাশ পেয়েছে এবং তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মির্জা আব্বাস বলেন, একটি ভুল, মিথ্যা ও সাজানো গল্পের ওপর মামলা তৈরি করে সাজা দেওয়া হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বিদেশি শক্তি দ্বারা একটি পরিকল্পিত হামলা। এ হামলায় কখনোই বিএনপি যুক্ত ছিল না। একটা বিদেশি শক্তি এ অপকর্ম করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসাতে চেয়েছিল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি। লন্ডন থেকে পাঠানো বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, মহান আল্লাহর দরবারে আমি শুকরিয়া আদায় করছি, বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে আজ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ রায়ে প্রমাণ হলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ মামলায় তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করেছিল। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনীত মামলার অভিযোগ থেকে তিনি আইনগতভাবে মোকাবিলা করে উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনিত সব মামলাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক ছিল।
মামলার রায়ের পর তারেক রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘তারেক রহমানকে ২১ আগস্টের মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও তার মামলা আছে। সেসব মামলার শুনানি শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা করব, ওই মামলায়ও একই ধরনের ফল পাব।’ মামলার বিষয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়েছে ২০০৪ সালে। তখন তৎকালীন সরকারের অধীনে একটি তদন্ত হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবেদন হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের ৯ জুন প্রথম একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সেখানে ২৮ জন আসামি ছিলেন। ৬১ জনের সাক্ষী হওয়ার পরে আরেকটি তদন্ত করা হয়। এতে আরো ৩০ জনকে নতুন আসামি করা হয়।’
শিশির মনির বলেন, ‘দ্বিতীয় তদন্ত করা হয় মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে। আমরা আদালতে দেখিয়েছিলাম এ ভারতীয় উপমহাদেশে বিগত ৪০০ বছরের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে দ্বিতীয় কনফেশনের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের সাজা কাউকেই দেওয়া হয়নি।’ এর আগে সকালে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
‘বিচারককে অবৈধ’ বলার কারণ হিসেবে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের অন্যতম দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘২১ আগস্টে বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল পাশের একটি ময়দানে। কিন্তু তারা সরকারকে না জানিয়ে স্থান পরিবর্তন করে রাস্তার মধ্যে সমাবেশ করেন। এটা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তৎকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তিনি (শেখ হাসিনা) এ কাজটি করেছেন। এ গ্রেনেড হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।’
"