বদরুল আলম মজুমদার

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪

নির্বাচনী মাঠ গড়তে কৌশলী জামায়াত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ভোটের মাঠে বেশ সরব। নির্বাচন কবে হবে, সেরকম ধারণা না থাকলেও আসনওয়ারি নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। দীর্ঘ ১৭ বছর রাজনীতির মাঠে স্বনামে কোনো সভা-সমাবেশ করতে না পারার ক্ষতি শতভাগ পুষিয়ে নিতে কাজ করছে জামায়াত। এজন্য দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি নানান সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের ব্যস্ত রাখছে দলটি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে বিভিন্ন রকম সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানানভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে নিজেদের পক্ষে ভোট বাড়ানোর কৌশল থাকছে ঘুরেফিরে। আসনওয়াইজ জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে এমন আসনগুলোতে নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ড জোরেশোরেই চলছে, অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন আসনগুলোতে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীকে দিয়ে নানান সামাজিক কাজে যুক্ত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে দল। তাই আগাম ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে আপাতত দুটি কৌশল নিয়ে কাজ করছে জামায়াত। দুই কৌশলের মধ্যে রয়েছে একক নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতির পাশাপাশি জোটগত নির্বাচনের চিন্তাও।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও রংপুর অঞ্চলের সাংগঠনিক সমন্বয়ক মাওলানা আবদুল হালিম প্রতিবেদককে বলেন, জামায়াত বরাবরই সামাজিক নানান কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করে। এটি নিয়ে নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আসনওয়ারি জামায়াতের ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন করতে হলে প্রতিটি আসনে আলাদা আলাদা ফ্যাক্টর থাকে। সেগুলো মাথায় নিয়েই কাজ করতে হয়। জোটগত নির্বাচন হলে একধরনের কৌশল থাকে আবার একক নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে ভিন্ন রকম। তবে জামায়াত এখন পর্যন্ত ৩শ’ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনী কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে মাঠে সরব দলটির নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের মূল লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা। সেজন্য এখন থেকে মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নানান দলীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।

দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, নির্বাচনের ব্যাপারে জামায়াতের দুই ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রথমত, জামায়াত নিজেরাই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের সময় যখন আসবে, তখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করবে, সেই পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে- তা এখনই বলার সুযোগ নেই।

জামায়াতে ইসলামীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে তাদের দুই শতাধিক আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বাকি আসনের প্রার্থী তালিকা বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। তবে নির্বাচনের সময় বিরাজমান পরিস্থিতির আলোকে ইসলামী দলগুলো নিয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার জন্যও একটি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াত নেতারা জানান, এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সারাদেশেই নানান কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে যেসব নির্বাচনী আসনে ভালো করতে পারবে, সেসব আসনে প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে এ সংক্রান্ত কমিটিগুলোর নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। বৈঠক থেকে জেলাগুলোর দায়িত্বে থাকা নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। যেসব আসনে প্রার্থী এখনো বাছাই হয়নি, সেখানে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় নতুন প্রার্থী যোগ-বিয়োগ করছে এ কমিটি।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছি, এগুলো ছাড়া সব নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণও করেছি। নির্বাচনি দল হিসাবে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের বক্তব্য জামায়াতে ইসলামীর আমির পরিষ্কার করেছেন, ন্যূনতম যে সংস্কার দরকার, আমরা চাই এ সংস্কারগুলো দ্রুত করা দরকার। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে দেওয়া উচিত।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, জরুরি সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে সরকার। তবে সেটি সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দল দুটি অংশ নিয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি ও জামায়াত। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে ১৬ বছর পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরেছে জামায়াতে ইসলামী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close