চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফের জানাজায় মানুষের ঢল

হত্যায় আটক ৩০, ফুটেজ দেখে শনাক্ত ৬

চট্টগ্রামে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় ৩০ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এতে বলা হয়, আটকদের মধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ছয়জনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ২১ জনকে আটকের কথা বলা হয়। এদিকে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজায় মানুষের ঢল নামে চট্টগ্রামে। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক ফেসবুক পোস্টে এ ৬ জনকে শনাক্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন অন্তত ছয়জনকে আটক করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এ ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনকে আটক করে সিএমপি। বন্দরনগরে ককটেলসহ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে মঙ্গলবার সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিক্ষোভকারীরা ওই আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। ঘটনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি সবাইকে শান্ত ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনজীবীকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন এবং তিনি এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগে আটক ৩০ : গতকাল বুধবার সিএমপি জানিয়েছে, চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও আইনজীবী হত্যার অভিযোগে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নগরের কোতোয়ালি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে যৌথ বাহিনী। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীর পাথরঘাটা মেথর পট্টি, আন্দরকিল্লা, হাজারী গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ। কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, আটকদের সংশ্লিষ্টতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে আইনজীবী নিহতের ঘটনায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও যৌথবাহিনী তাদের আটক করে। এ ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই চলছে। দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। যাচাই-বাছাই শেষে এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ দল নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড় ও আন্দরকিল্লাসহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গত সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হয়। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে পাঠানোর পথে তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে দেয় তার ভক্তরা। তাদের সরিয়ে দিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণকে কারাগারে নেওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর ভক্তদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের ওই আইনজীবী নিহত হন।

আইনজীবী আলিফের জানাজায় মানুষের ঢল : চট্টগ্রাম আদালতে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে সাইফুলের মরদেহ আনা হয়। পরে আদালত প্রাঙ্গণেই প্রথম জানাজা এবং জমিউত-উল-ফালাহে দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জানাজায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করাসহ ছাত্র আন্দোলনের হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী জানাজার ইমামতি করেন। সেখানে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ। এ সময় জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো চট্টগ্রাম নগরী। এ সময় দূরদূরান্ত থেকে লাখো মানুষকে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের জানাজায় শরিক হতে আসতে দেখা যায়।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি, কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা মাওলানা শাহজাহান, বিএনপি নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরী, এরশাদ উল্লাহ, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। এছাড়া জানাজার আগে সমন্বয়ক আর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। তারা সাইফুলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি করার দাবি জানান। এ সময় হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ। মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হলসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close