নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়া ট্রাস্ট ও বড়পুকুরিয়া মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বুধবার খালেদা জিয়াসহ অন্য দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায়ও খালাস পেয়েছেন খালেদা জিয়া। ছয় বছর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের দণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে বুধবার খালাসের রায় দিলেন। মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে গত ২০ নভেম্বর আপিল শুনানি শুরু হয়। তার আগে ৩ নভেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য নিজ খরচে পেপারবুক তৈরির অনুমতি দেন হাইকোর্ট। আদালতে গতকাল বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল শুনানি হয়। শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার উপস্থিত ছিলেন। মামলার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালত বলেছেন, আপিলটি লাইন বাই লাইন পড়েছেন। এভিডেন্সগুলো দেখেছেন। এরপরই আপিলটি মঞ্জুর করেন আদালত। দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, খালেদা জিয়া ও আরো দুজনের পৃথক দুটি আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। মামলায় তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত। অন্য দুজন হলেন- সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান ও বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম। আদালতে শুনানি শেষে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিগত ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড স্থগিত করেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে চলতি বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। পরদিন ৬ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ ও মুক্তি দেওয়া হয়।
বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া খালাস : বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির দুই শীর্ষনেতাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক মোহাম্মদ আবু তাহের খালাসের আদেশ দেন বলে জানান আদালতের কর্মচারী মেহেদী হাসান শাকিল। তবে সাবেক জ্বালানি সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মইনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোলমাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এদের মধ্যে একমাত্র সিরাজুল এখন পলাতক।
২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি চুক্তিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দেওয়া ১৫৯ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে খালেদা ও তার মন্ত্রিসভার ১০ সাবেক সহকর্মীসহ ১৬ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশন শাহবাগ থানায় মামলাটি করে। ২০০৮ সালের ৫ অক্টোবর এ মামলায় খালেদাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও আবদুল মান্নান ভূঁইয়াসহ সাত আসামি বিচার চলাকালে মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ভিসার জন্য মার্কিন দূতাবাসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন খালেদা জিয়া : ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা রয়েছে। বুধবার দুপুর ২টায় গুলশানের বাসভবন থেকে মার্কিন দূতাবাসে যান খালেদা জিয়া। এরপর সেখানে তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে বিকেলে গুলশানের বাসায় ফিরোজায় ফিরে আসেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ছিলেন তার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
"