নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজিত করছে : ফখরুল

কিছু মানুষ নিজেদের বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন আর সমগ্র জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের বিজয় অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। রক্তে ভেসে গেছে বাংলাদেশের রাজপথ। দেশের মানুষ বারবার দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তার ফল কি এ বাংলাদেশ? আজকে তিন মাসও যায়নি রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ! কেন এ ভয়াবহ হিংসা? সমস্যা কোথায়? আর কত এ বিভাজন?

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার কারো একক নয়। অসংখ্য তরুণ-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করুন। এমন কোনো কথা বলবেন না; যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যদি দেশকে ভালোবাসেন তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। কারো কাছে মাথা নত করবেন না। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আজিজুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে? এটা কি চিন্তা করতে পারেন? গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কথা বলতে হবে। আজকে কিছু মানুষ নিজেদের বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন। আর গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্য মিডিয়ায় যে ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে, তার নিন্দা জানাই। যে মিডিয়ার স্বাধীনতার জন্য সারা জীবন লড়াই করলাম, সেখানে জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এ বাংলাদেশ আমি কখনো দেখতে চাইনি। আগেও না। কারো দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জীবন দিয়ে রক্ষা করতে হবে। এটাই গণতন্ত্র। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি কারণ সে আমার গলাটিপে ধরেছে। অতএব ভেবেচিন্তে কাজ করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি কিছুসংখ্যক মানুষ আছেন, যারা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও লেখেন। আমরা কি বুঝি, আমাদের ভয়টা কোথায়? কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি? তিনি বলেন, ১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করছি। যেকোনো সময় জেলখানায় যেতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি বাক, ব্যক্তি ও ভোটের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা লড়াই করে এ জায়গায় এসেছি। সুতরাং ধ্বংসাত্মক বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আমরা গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ প্রতিষ্ঠা করব। আমার দল ও আমি যা বিশ্বাস করি জীবন গেলেও বলব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ডা. মিলন আমাদের অনুপ্রেরণা। তার অবদান কখনো অম্লান হবে না। গণতন্ত্রের সব শহীদকে শ্রদ্ধা জানাই। আসুন, ডা. মিলন যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে জীবন দিয়েছেন, সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি। যার জন্য জীবন দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ ৬ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমাদের ব্যর্থতা যে শহীদ ডা. মিলনের স্বপ্ন আমরা বাস্তবে রূপদান করে পারিনি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিভেদ বিভাজন রেখে কখনো এগিয়ে যাওয়া যায় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close