ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দু’সন্তানকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে হত্যার পর স্বামী জনি বিশ্বাস আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার পৌর শহরের রাণীবাজার শাহী মসজিদের পেছন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানাপুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন- মৃত গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে জনি বিশ্বাস (৩২), তার স্ত্রী নিপা মল্লিক (২৬), ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৭) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৪)। নিহত নিপা গাজীপুর জেলার নির্মল মল্লিকের মেয়ে।
স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের রাণীবাজার শাহী মসজিদের পেছনে শাহজাহান মিয়ার বাড়ির সপ্তমতলার একটি রুমে পরিবার নিয়ে সাবলেট থাকতেন জনি বিশ্বাস। গত রবিবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নরসিংদীর আনারাবাজ নিজ গ্রামে যায় জনি বিশ্বাস। সেখান থেকে গত সোমবার সন্ধ্যায় এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে। গতকাল মঙ্গলাবর সকাল থেকে পার্শ্ববর্তী রুমে ভাড়াটিয়া ও জনি বিশ্বাসের কর্মস্থলের কর্মচারীরা ডাকাডাকি করলে তার পরিবার দরজা না খোলায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হলে দরজা ভেঙে দেখতে পায় চারজনই মৃত অবস্থায় রয়েছে। তাদের মধ্যে জনি বিশ্বাস ফাঁসিতে ঝুলে আছেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।
এ বিষয়ে বিল্ডিং মালিক রিনা বেগম বলেন, আড়াই মাস আগে জনি বিশ্বাসের পরিবারকে ভাড়া দেয়। আজ সকাল ১১টায় পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া জানান তারা দরজা খুলছে না? পরবর্তীতে আবার ৩টায় জানান দরজা খুলছেই না। স্থানীয়রা এসে দরজা ভেঙে দেখতে পায় তারা মৃত অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া সৃষ্টি বর্মণ বলেন, গত সোমাবার জনি তার পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় বাসায় আসে। আমি তখন বাজারের পাশে একটি মাজারে চলে যাই। রাতে এসে দেখি তাদের দরজা বন্ধ। আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় তাদের ডাকাডাকি করলেও তারা দরজা খুলেনি। আবার বেলা ৩টায় ডাকাডাকি করলেও দরজা না খোলায় আমি বাড়ির মালিকসহ প্রতিবেশীদের খবর দিই। স্থানীয়রা এসে দরজা ভেঙে তাদের মরদেহ দেখতে পায়।
এ বিষয়ে নিহত জনি বিশ্বাসের মা শিখা রাণী বিশ্বাস জানান, ১০ বছর ধরে জনি ও তার দুই ভাই ভৈরবে থাকে। জনি ভৈরব বাজার মিজান মিয়ার ওয়ার্কশপে কাজ করতো। আট বছর আগে ছেলেকে বিয়ে করাই। বিয়ের পর থেকে বউয়ের সঙ্গে আমার ছেলের কলহ লেগেই থাকতো। দুইদিন আগে ছেলে তার বউকে নিয়ে বাড়ি থেকে এসেছে। ছেলে আমাকে ভয় পায় বলে এসব কিছুই জানাতো না। আমি ছোট নাতনীর মুখে এসব শুনতে পেয়েছিলাম। ছেলের বউ ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। কী কারণে আমার ছেলে এ কাণ্ড ঘটালো, আমি বুঝতে পারছি না।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, ধারণা করা হচ্ছে জনি বিশ্বাস প্রথমে স্ত্রীর গলা কেটেছে পরে দুই ছেলেমেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছে। পরে নিজেই ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো কিশোরগঞ্জের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর জনি বিশ্বাস আত্মহত্যা করেছেন।
"